আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা।
আম হচ্ছে আমাদের দেশের একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও সুস্বাদু ফল। এই ফলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ যা শরীরের বিভিন্ন ভিটামিন এর অভাব দূর করে থাকে।আম আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এই ফলটি গ্রীষ্মকালীন ফল। এই আম গ্রীষ্মকালে নানা রকম ভাবে খাওয়া যায় এটি পাকা কাচা দুই ভাববেই খাওয়া যায়।
আমরা এই আর্টিকেলে আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাই আপনাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
আম খেলে কি ওজন বাড়ে
আম হচ্ছে একটি সুমিষ্ট জাতের ফল এবং এর উপকার অনেক।অনেকেই মনে করেন যে আম খেলে হয়তো ওজন বৃদ্ধি পায়। আবার অনেকেই মনে করেন বেশি আম খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।আম এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ ও সি। এর মধ্যে আরো রয়েছে বিটা ক্যারোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো কাজ করে।
তাই পরিমাণ মতো খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। আপনারা চাইলে অপরিমিত খাবারের পরিবর্তে আপনারা আম খেতে পারেন। এতে আপনাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। আমের মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ ভালো থাকার কারণে আম অবশ্যই মেপে খাওয়া দরকার এতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে না। যারা ডায়েট করেন তাদের জন্য আম সীমিত পরিমানে খেতে হবে এতে আপনাদের শরীরের ওজন পরিবর্তন হবে না।
আমের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা
আম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। এটি আমাদের দেহের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি যোগায়। এই ফলটি বাংলাদেশে এপ্রিল মাস থেকে শুরু করে জুলাই বা আগস্ট পর্যন্ত আমাদের দেশে পাওয়া যায়।এই আমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি,শতকরা আমিষ,ভিটামিন এ ও পটাশিয়াম থাকে। তাই আম কাঁচা খাওয়া থেকে পাকা আম খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
কারণ এর মধ্যে রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো। আম খেলে আমাদের পাকস্থলীতে থাকা খাদ্য ভালোভাবে পরিপাক হয়। আমের মধ্যে রয়েছে বিশেষ কিছু এনজাইম যা আমাদের খাদ্য উপাদানের প্রোটিন কে ভালোভাবে ভেঙ্গে শরীরে কাজ করতে পারে। আমের মধ্যে আরও রয়েছে যেমন ভিটামিন সি ও এ যা আমাদের রাতকানা রোগ ও শরীরের দুর্বলতা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন পরিমাণ মতো আম খাওয়া এবং নিজের স্বার্থের খেয়াল রাখা। আমরা সবসময় চেষ্টা করবো পরিমাণ মতো আম খাওয়ার।
আমের উপকারিতা
আম খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং একটি খুবই সুস্বাদু ফল। এই ফলটি আমাদের নানা রকম রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বৃদ্ধি করাতে সাহায্য করে।নিচে আমের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- পাকা আম আমাদের দেহের ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং ত্বককে মসৃণ করতে সাহায্য করে। সাথে এটি আমাদের দেহের বাইরে ভেতরে উভয় দিক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি আমাদের ত্বকের লোম পরিষ্কার ও ব্রণের সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
- পাকা আমের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ লবন যা আমাদের শরীরের দাঁত,নখ, চুল ইত্যাদি মজবুত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- আমের আরও বিভিন্ন উপকারিতার মধ্যে রয়েছে পুষ্টি উপাদান। পাকা আমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল সহ আরো বিভিন্ন উপায় উপাদান যা আমাদের হজম শক্তি বাড়ায়।
- আমরা যদি প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ আম খেতে পারি তাহলে এটি আমাদের দেহের ভিটামিন এর পরিমাণ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
- আমের মধ্যে আরও রয়েছে টারটারিক অ্যাসিড ও সাইট্রিক এসিড যা আমাদের শরীরের ঘাড় ধরে রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে থাকে।
- কাঁচা আমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আমাদের দাঁত হাড় ইত্যাদি গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- শুধু তাই নয় আম আমাদের বড় বড় রোগবালায় যেমনঃ ক্যান্সার,হৃদরোগ, হার্ট রোগ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে সাহায্য করে।
আম বেশি খেলে যেসব সমস্যা হয়?
গ্রীষ্মের সময় আসলে আমাদের সাথে একটি ফল পরিচিত হয়ে যায় সেটি হচ্ছে আম। এটি খুব সুস্বাদু একটি ফল যার জন্য বাজারে এর আমদানি ও রপ্তানিও বেশি হয়ে থাকে। তবে বেশি পরিমাণে আম খেলে আমাদের শরীরের জন্য তা বিপদজনক হতে পারে। নিচে বেশি আম খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- একটি আমের মধ্যে প্রায় ১৩৫ ক্যালোরি থাকে। এর মধ্যে ভিটামিন সি এবং ক্যালরি দুইটাই পরিমাণে বেশি থাকে। তাই ওজন কমাতে চান তারা অবশ্যই আম পরিমাণ মতো খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- আমের মধ্যে ফ্রকটোজ ভরপুর পরিমাণে রয়েছে। যা আমাদের দেহের রক্তের চিনির মাত্র বাড়িয়ে দেয়। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই বেশি আম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তাছাড়া আপনার ডায়াবেটিসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
- বেশি পরিমাণে আম খেলে আমাদের হজমের সমস্যার দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও অতিরিক্ত আম খাওয়ার কারণে আমাদের দেহের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- যাদের আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই আমকে এড়িয়ে চলবেন। তা না হলে আপনাদের বাতের ব্যথা বাড়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।
- তাছাড়াও যাদের আমি এলার্জি রয়েছে তারা চাইলে আম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
আম বেশি খেলে উপরের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত হবে সর্বদা পরিমাণ মতো আম খাওয়ার।
আম খাওয়ার নিয়ম
গ্রীষ্মের আগমন মানেই ফলের রাজা আমের আগমন হয়। আর এই ফল হচ্ছে সমষ্টি ও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে এই ফলের পুষ্টিগুণের সাথে কিছু ক্ষতিকর দিকগুলো রয়েছে। তবে আম খেলে ক্ষতি হবে এইরকম কিছুই না। শুধু আম খাওয়ার কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে এবং সতর্কতার সাথে খেতে হবে। নিচে আম খাওয়ার নিয়ম বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- প্রথমত আমের সাথে কখনো দই মিশিয়ে খাবেন না। অনেকেই রয়েছেন যারা আমের সাথে দই মিশিয়ে খেতে ভালোবাসেন। তবে আমাদের উচিত হবে আমকে দইয়ের সাথে মিশিয়ে না খাওয়ার। তা না হলে আমাদের ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আমরা অবশ্যই খেয়াল রাখবো যেন আমরা কখনোই আম খাওয়ার পর পানি না খাই। তা না হলে এটি আমাদের হজম শক্তি কমিয়ে দেয় এবং পেটের মধ্যে ভয়াবহ এসিড সৃষ্টি করে।
- আম খাওয়ার আগে অবশ্যই আমকে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। কারণ বাজারের ক্রয় কৃত আমের রয়েছে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ। যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তাই আমরা আম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আমাকে ভালোভাবে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখবো।
- আমরা যারা ডায়েট করি। তাদের জন্য অবশ্যই রাত্রে খাওয়ার পর আম যেন না খায়। আমি রয়েছি প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা রাত্রে খাওয়ার পর মোটেও খাওয়া উচিত হবে না। এতে আমাদের শরীরে ওজন বাড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আমরা চাইলে সকালে বা বিকেল বা সন্ধ্যায় স্ন্যাকস হিসেবে আম খেতে পারি।
- আমরা আম খাওয়ার পর অবশ্যই করলা খাব না। কারণ আমের সঙ্গে রয়েছে করলার গভীর শত্রুতা। কারণ আম খাওয়ার পর করলার তরকারি খেলে বমি বমি ভাব আস্তে পারে। সাথে আমাদের শ্বাসকষ্টের ও সমস্যা হতে পারে।
আমরা আম খাওয়ার সময় উপরের নিয়ম গুলোর দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখব। আর উক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করব এতে আমাদের কোন ধরনের ক্ষতি না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, ইতিমধ্যে জেনেছি আম খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের মাঝে আমের পুষ্টিগণ ও উপকারিতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরার। তাহলে এই ধরনের আরো নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ রইল। আপনারা এভাবে আমাদের পাশে থেকে সাপোর্ট করুন। যাতে আমরা আপনাদের আরো নতুন নতুন বিষয় জানতে সাহায্য করতে পারি। আপনারা চাইলে আমার এই ওয়েবসাইটটি ঘুরে আরো নিত্য নতুন জিনিস সম্পর্কে জানতে পারেন। ধন্যবাদ !
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url