চুলের যত্নে কি কি খাওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা।

মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধির আরেকটি উপাদান হচ্ছে মানুষের চুল। একজন মানুষের চুল কিভাবে বৃদ্ধি পায় এবং তা কতটা স্বাস্থ্যকর হয় এই সব কিছু নির্ভর করে মানুষের বয়স, পরিবেশ, জেনেটিক্স ও খাবার খাওয়ার উপর। তবে এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের খাবার উপর নির্ভর করে আমাদের চুল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আমাদের সবার উচিত হবে খাবারের মাধ্যমে চুলের পুষ্টিগুণ ও চুলের ঘাটতি পূরণ করে রাখার চেষ্টা করা।
ঘন চুল
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে চুলের যত্নে কি কি খাওয়া উচিত এই বিষয় সহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাই আপনারা মনোযোগ সহকারে আমাদের পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আরো বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আপনাদের অনুরোধ রইল আমার আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার।

চুলের কিভাবে যত্ন নেওয়া উচিত?

মানুষের সৌন্দর্য মানুষের চুলের উপর নির্ভর করে। তাই প্রত্যেকটা মানুষই চায় তার চুল যেন সব সময় সুন্দর ও সতেজ থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের আবহাওয়া যেরকম তাতে আমাদের চুলের সুস্থ রাখাটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আমরা আমাদের চুলের কিভাবে যত্ন নিতে পারি। নিচে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • আমরা সব সময় চেষ্টা করবো চুলকে সুরক্ষিত রাখার। আমাদের উচিত সর্বদা চুলকে সূর্যের আলো, বৃষ্টি, কড়া রোধ, ধুলোবালি ইত্যাদি থেকে চুলকে সবসময় সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করব। কেনা এইসব কিছু আমাদের চুলের দুর্দশা বয়ে আনে।
  • ভেজা চুলকে ভালোভাবে এবং সাবধানে ট্রিট করতে হবে। কারণ ভেজা চুল ভেঙে যাওয়া সবচেয়ে সহজ তাই আমরা অবশ্যই শ্যাম্পু করার সময় চুলে বেশি চাপ প্রয়োগ করবো না এবং গোসল করার পরপরই চুল আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকবো। এতে আমাদের চুলে কোন প্রকার ড্যামেজ বা হেয়ার লস হবে না।
  • আমরা অবশ্যই একটা জিনিস সবচেয়ে বেশি খেয়াল করব সেটা হচ্ছে শ্যাম্পুকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা। আমাদের চুলে যদি ময়লা বেশি হয়ে যায় তাহলে দরকারে দুইবার শ্যাম্পু করতে পারেন। তাছাড়া আমরা স্বাভাবিকভাবে সপ্তাহে তিনবার শ্যাম্পু করতে পারি। আর অবশ্যই আমরা শ্যাম্পু কেনার সময় ভালো শ্যাম্পু কেনার চেষ্টা করব।
  • আমরা যারা চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করি তারা অবশ্যই একটি জিনিস খেয়াল করব। কন্ডিশনার আমাদের চুলকে মসৃণ রাখে তার মানে হলো এটি চুলের গোড়ায় কোন প্রয়োজন নেই। তাই আমরা চেষ্টা করব একটি চুলের গোড়া থেকে যেন দুই ইঞ্চি দূরে থাকে। তা না হলে এটি আমাদের চুলে তৈলাক্ত লাগতো সৃষ্টি করতে পারে।
  • আমরা চুলের যত্নে অবশ্যই একই ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করব এতে আমাদের চুলের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না।
  • আমাদের যাদের চুল কোঁকড়া টাইপের তারা অবশ্যই হিট দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যেন অতিরিক্ত হিট না হয়ে যায়। তা না হলে আমাদের অতিরিক্ত হিটের কারণে চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • আমরা অবশ্যই নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহার করব। কেননা তেল চুলকে সুন্দর ও লম্বা করতে সাহায্য করে এবং তেল চুলের পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করে। তাই আমরা অবশ্যই নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহার করার চেষ্টা করব।
আমরা চুলের যত্ন রাখতে উপরের বিষয়গুলো মেনে চলতে পারি। এতে আশা করা যায় আমাদের চুলের কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে না। তাই আমরা সর্বদা চেষ্টা করব ওপরের নিয়ম নীতিগুলো মেনে চলার।

ভেজা চুলে নাকি শুকনো চুলে তেল ব্যবহার করা উচিত?

আমাদের চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তেলের ভূমিকা অপরিসীম। কেননা তেল আমাদের চুলের পুষ্টিগুণ ও সৌন্দর্য বজায় রাখে। তাই আমরা অবশ্যই নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহার করার চেষ্টা করব। আমরা চুলে তেল দেওয়ার সময় নানারকম ভুল করে থাকি এইসব কারণেও আমাদের চুলের দুর্দশা হয়ে পড়ে। আমাদের চুলে তেল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবো অবশ্যই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই দিব।

 বিষয়টা এমন না যে বেশি তেল দিলে চুল বেশি ভালো থাকে। এরকম কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমরা পাইনি। আমরা জানি কোন কিছুই বাড়তি আমাদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আমরা সব সময় খেয়াল রাখবো তেল দেওয়ার সময় আমাদের চুল যেন একদম পরিষ্কার ও শুকনো থাকে। আমরা কখনোই ভেজা চুলে তেল মালিশ করব না। 

এতে আমাদের উপকারের বদলে অবকার সৃষ্টি হবে। চুলের যত্নে আমরা সব সময় চেষ্টা করব যাদের চুল তৈলাক্ত বেশি তারা ঘন ঘন তেল দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। রাত্রে ঘুমানোর আগে কখনোই তেল দিয়ে ঘুমাবেন না।চুলে তেল দেওয়ার সময় আমরা অবশ্যই ওপরের বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করব। এতে আমাদের চুল হবে সুন্দর এবং মসৃণ।

চুলের যত্নে কি কি খাওয়া উচিত

চুল আমাদের বয়স, পরিবেশ ওষুধ ও খাবার সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে চুল বৃদ্ধি ও চুল ঝরে পড়ে। তবে চুলকে সুস্থ সবল ও মজবুত রাখতে খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ চুলের যথাযথ পুষ্টি, ভিটামিন, প্রোটিন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে চুল সবল ও মজবুত থাকে। তাই আমাদের উচিত হবে চুলের যত্নে সর্বদা পুষ্টিকর ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া। চুলের যত্নে আমাদের কি কি খাওয়া উচিত হবে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
চুলের যত্নে কি কি খাওয়া উচিত
  • আমরা চুলের যত্নে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার চেষ্টা করব। কারণ এর মধ্যে রয়েছে বায়োটিন যা আমাদের চুলের পুষ্টি জোগাতে বিশেষভাবে উপকারী। তাই আমরা প্রত্যেকদিন একটি করে ডিম খাওয়ার চেষ্টা করব।
  • বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে চুলের বৃদ্ধিতে ভিটামিন এ এর গুরুত্ব অপরিসীম। আর পালংশাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা আমাদের শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করে থাকে।
  • চুলের বৃদ্ধির জন্য আরও একটি খাবার যেটি হল চর্বিযুক্ত মাছ খুবই উপকারী একটি খাওয়ার। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাটিক অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন ডি-৩ ও বি এই সকল উপাদান আমাদের চুলকে মজবুত ও বৃদ্ধি করতে খুবই উপকারে আসে।
  • চুলের যত্নে আমরা প্রতিদিন চাইলে মিষ্টি আলু খেতে পারি এটি আমাদের ভিটামিন এ এর চাহিদা ৪৮ শতাংশ পূরণ করে থাকে। যা আমাদের চুল জন্য একটি খুবই উপকারী খাবার।
  • আমরা চাইলে প্রতিদিন কাজুবাদাম, কার্ড বাদাম ও খেজুর খেতে পারি। এগুলো আমাদের চুলের বৃদ্ধি ছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, চুলের যত্নে আমাদের উপরিউক্ত খাবারগুলো খাওয়া চুলের জন্য খুবই উপকারী। এ সকল খাবার গুলো আমাদের চুলকে রাখে মজবুত ও সুন্দর। তাই আমরা চাইলে চুলের যত্নের উপরের খাবারগুলো খেতে পারি।

চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায়

চুল পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষেরই কম বেশি উঠে থাকে। কারো বেশি পরে আবার কারো কম পড়ে। তবে দিনে ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক। এর চাইতে যদি বেশি পড়ে তাহলে প্রত্যেকটি মানুষেরই চিন্তা বেড়ে যায়। আর একেই বলে হেয়ার ফল। আমাদের বেশি চিন্তার কারণে চুল উঠে থাকে।
চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায়
  • আমরা চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথমে চুল পড়ার কারণটা বের করে আনতে হবে। তাহলে আমাদের চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। আমরা এই চুল পড়া রোধে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারি। নিচে সকল ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • আমরা আমলকি ফলটি ব্যবহার করতে পারি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এই দুটি উপাদান আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী। আমরা এই আমলকি ফলটি তেলের সাথে মিশ্রণ করে একটি পেস্ট তৈরি করে মাথায় ব্যবহার করতে পারি। এই মিশ্রণক্রিত উপাদানটি আমাদের চুল পড়া রোধ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
  •  আমরা চুল ভালো রাখতে আলো ভাইয়েরাও ব্যবহার করতে পারি। অ্যালোভেরা আমাদের ত্বক ও চুল দুটোর জন্য উপকারী। আমরা এই এলোভেরার ভেতরের শ্বাস বের করে চুলের গোড়ায় ভালোমতো লাগিয়ে নিয়ে 40 থেকে 50 মিনিট পর্যন্ত রেখে দিয়ে এরপরে গোসল করে নিতে পারি। এই ভাবে সপ্তাহে তিন দিন মাথায় ব্যবহার করতে পারি। এতে আমাদের চুল উঠা রোধ হতে পারে।
  • আমরা আরও একটি উপাদান ব্যবহার করতে পারি সেটি হচ্ছে মেথি। মেথি আমাদের চুল পড়া আটকাতে বিশেষভাবে উপযোগী। কারণ এর মধ্যে রয়েছে প্রোটিন এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড, যেটি আমাদের চুলের গোড়া মজবুত এবং চুলকে লম্বা করতে সাহায্য করে
  • চুলে প্রচুর পরিমাণে খুশকি থাকলে আমরা নিম পাতা অথবা তুলসী পাতা ব্যবহার করতে পারি। কারণ খুশকি আমাদের চুল ওঠার একটি অন্যতম কারণ। আর এই খুশকি দূর করতে নিম পাতা ও তুলসী পাতা বিশেষভাবে উপযোগী। 

চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য কি করা উচিত?

আমরা সকলেই চাই যে আমাদের চুল সর্বদা মজবুত এবং সুন্দর ঘন থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল হয়ে পড়ে দুর্বল এবং ঝরতে শুরু করে। চুলের প্রতি অবহেলার কারনে চুল ঝরতে পারে। তাই চুলকে মজবুত রাখতে আমরা যে সকল কাজগুলো করতে পারি তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  • আমরা চুলকে মজবুত রাখতে পানির সাথে আমলকি ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে দিতে পারি। এই মিশ্রণটি আমাদের চুলে এক ঘন্টা রেখে আমরা যথাযথ গোসল করে নিতে পারি এতে আমাদের চুলের গরম মজবুত হবে।
  • আমরা চাইলে চুলে শিকাকাই ও দই একসাথে মিশিয়ে চুলে 30 মিনিট ধরে রেখে দিতে পারি। এতে আমাদের মজবুত হতে শুরু করে।
  • আমরা নিমপাতা ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মাথায় দিতে পারি এটি আমাদের চুলের গোড়া মজবুত সাহায্য করে।
  • আমরা চাইলে ই-ক্যাপ নামের একটি ক্যাপসুল রয়েছে যা আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী। আমরা সেই ক্যাপসুলটি মাঝেমধ্যে খেতে পারি।
তাই বলা যায় যে উপরে উঠতো বিষয়গুলো আমরা মেনে চলতে পারি তাহলে আমাদের চুল মজবুত ও সুন্দর থাকবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে চুলের যত্নে কি কি হওয়া উচিত ও চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায় সহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চুলের যত্নে আমরা যে সকল পদক্ষেপ নিলে আমাদের চুল মজবুত এবং ঘন থাকবে সেই বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এরকম আরো নিত্যনতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদের সাপোর্ট করুন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url