ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, আবারো আজকে নিয়ে চলে এলাম আপনাদের মাঝে একটি নতুন আর্টিকেল। আজকের এই আর্টিকেলটির বিষয় হচ্ছে ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা। আমরা আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তাই এই আর্টিকেলটি পুরোটাই মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো। কেননা এখানে নানান রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হবে।
শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার ভূমিকা
মানবজীবনে খেলাধুলা হচ্ছে এমন একটি কার্যক্রম যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষ বিনোদন উপভোগ করে। আর এই খেলাধুলার মাধ্যমেই একজনের সাথে অন্যজনের বন্ধুত্ব টিকে থাকে। আর এই খেলাধুলার মাধ্যমেই মানুষের শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি হয়ে থাকে। খেলাধুলা করলে আমাদের শারীরিক গঠনের বিকাশ হয় পাশাপাশি এটি আমাদের মানসিকভাবে রিলাক্স হতে সাহায্য করে।
আর এই খেলাধুলা হচ্ছে এমন একটি কার্যকলাপ যেখানে ছোট বড় সবাই একসঙ্গে একসাথে আয়োজন এর মাধ্যমে খেলাধুলা করা যায়। শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষজনের শারীরিক শক্তি ক্ষয় হয়। যেটি আমাদের দেহের কোষের পুষ্টি স্বাভাবিক করে এবং রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে। খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের মানসিক চাপ দূর হয়।
ফলে মানুষ বিজয় পরাজয়ের মাধ্যমেও মানুষের স্বাভাবিক জীবনের মত জয় পরাজয় মেনে নেওয়া যায়। তাই বলা যায় যে, খেলাধুলা আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে।
শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
শিশুদের শারীরিক শক্তি, চিন্তা-চেতনা, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি শিশু খেলাধুলার মাধ্যমে সে নিজেকে সমাজের সাথে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীল কল্পনার বিকাশ ঘটে। আগেকার সময়ে পাড়া মহল্লায় শিশুরা বিকাল হলেই একসাথে সবাই মিলে মাঠে ঘাটে খেলাধুলা করত। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগ হওয়ার কারণে শিশুরা এখন বেশিরভাগ সময়ই মোবাইল ফোন এর গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
এতে শিশুদের মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে শিশুদের মধ্যে তাদের সাথীদের সাথে তেমন আত্মক্রিয়া দেখা যায় না। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। কেননা খেলাধুলার মাধ্যমে একটি শিশু নিজেকে সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিবে এবং পাশাপাশি সে সমাজের মানুষের সাথে কি রকম আচরণ করতে হবে সে সকল বিষয় শিখে যাবে।
আর শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শিশুরা খেলাধুলার মাধ্যমে তারা বিশ্বের সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করতে শিখে। তারা খেলাধুলার মাধ্যমেই তাদের আবেগ অনুভূতি ও নিজেদের বিনোদন প্রকাশ করে থাকে। আর শিশুরা সাধারণত স্বাধীনভাবে খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। এতে করে তাদের নিজেদের সকল সরঞ্জাম গুলো নিজেরাই গুছিয়ে নিতে শিখে।
এভাবেই তাদের আস্তে আস্তে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটতে থাকে এই খেলাধুলার মাধ্যমে। তাই আমরা আমাদের শিশুদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে সাহায্য করবো। এতে করে বর্তমান যুগের শিশুরা মোবাইল ফোনের গেমস থেকে দূরে থাকবে এবং এর ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে।
ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
আমরা সবাই জানি ছাত্র জীবন মানেই হচ্ছে পড়াশোনার সময়। কারণ এই সময় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান কাজই হচ্ছে পড়াশোনা করা। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের শরীর চর্চা ও খেলাধুলার ও প্রয়োজন অপরিসীম। কারণ ছাত্র জীবনে যেমন পড়াশোনার গুরুত্ব রয়েছে। তেমনি পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
- মানুষ যে শুধু খেলাধুলায় আনন্দ ও বিনোদন উপভোগ করবে সেটাই শুধু খেলা নয়। খেলার মাধ্যমেই একজন ছাত্র ও ছাত্রী উভয়েরই চরিত্রের বিকাশ ও ঘটে থাকে।
- খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্র জীবনে নিজেদের মধ্যে একটি দলের গঠন হয়। যার মাধ্যমে সেই দলে একজন লিডার থাকে। যে তার দলকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আর এই খেলাধুলার মাধ্যমেই ছাত্র জীবনে ছাত্রছাত্রীরা একজন লিডারের মর্যাদা বুঝতে শিখে।
- খেলাধুলার মাধ্যমে এই যে একজন ছাত্রের শারীরিক গঠন বৃদ্ধি হয় তেমনটা শুধু না। এরকম অনেক খেলায় রয়েছে যেগুলো বুদ্ধির সাথে খেলতে হয়। সেই সকল খেলাধুলার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তার ও বিকাশ ঘটে থাকে।
- খেলাধুলায় পক্ষ বিজয় ও অপরপক্ষ পরাজয় এই সাফল্য ব্যর্থতার গ্রহণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে সাফল্য বা ব্যর্থতাকে সহজেই গ্রহণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
- ছাত্র জীবনের খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদের শরীর ও মন সতেজ থাকে। আমরা যদি বিকেল বেলায় খেলাধুলা করে নিজেদের শরীর চর্চা করি তাহলে রাত্রে আমাদের ঘুমটা খুব সুন্দর হয়। যার ফলে একজন ছাত্রের পরের দিনটি খুব সুন্দর ভাবে অতিবাহিত হয়।
- পাশাপাশি আমরা যখন সবুজ মাঠে খেলাধুলা করি তখন আমরা খেলাধুলায় মানসিক শান্তি পাই ও সেই সবুজ মাঠের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি।
আধুনিক সমাজে খেলাধুলার গুরুত্ব
বর্তমান সময়কে আমরা আধুনিক যুগ বলে থাকি। কারণ এই সময় আগেকার সময় থেকে নানার অংশে এগিয়ে গেছে। তবে সেই সাথে অনেক কিছুই আমাদের এই আধুনিক যুগে সাথে তাল মিলাতে গিয়ে হারিয়ে গেছে। আগের মতো শিশুরা এখন মাঠে আর খেলাধুলা করতে যায় না। আধুনিক যুগ হওয়ার কারণে সবার কাছেই কম বেশি অ্যান্ড্রয়েড ফোন রয়েছে। যার কারনে সকল শিশু বা ছেলেমেয়েরাই বেশিরভাগ সময় ফোন টিপে ব্যয় করে।
সেই জন্য আমাদের এই আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের খেলাধুলার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এই আধুনিক সমাজে খেলারও আধুনিকায়ন হয়েছে। এই আধুনিক যুগে যারা ইন্টারন্যাশনাল খেলায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়। তাদেরকে খুব সম্মানের সাথে পুরস্কৃত করা হয়। এতে করে সে, পুরো বিশ্বের কাছে নামের খ্যাতি অর্জন করে থাকে। তাই এই আধুনিক সমাজে খেলাধুলার গুরুত্ব অনেক।
কেননা এই খেলাধুলার মাধ্যমে একজন ছেলে বা মেয়ে এই আধুনিক সমাজের কাছে চিরস্মরণীয় হতে পারে। যদি সে একজন ভালো খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পারে। আর এই আধুনিক সমাজে নানান রকম প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার আয়োজন এর ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব খেলাতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ছেলেমেয়েরা তাদের জীবন বদলাতে পারে। পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক সমাজে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম।
খেলাধুলার ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হলো।
আমরা সকলেই জানি যে, খেলাধুলার মাধ্যমে একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। পাশাপাশি এই খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের নানা রকম উপকারিতাও রয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের যেসব ইতিবাচক দিকগুলো দেখা যায় তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- খেলাধুলা করলে এটি আমাদের হৃদরোগের সমস্যা থেকে বাঁচতে সাহায্য করে এবং খেলাধুলার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করে।
- খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ কমে, রক্ত চলাচল ঠিক রাখে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- শারীরিক সুস্থতার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে খেলাধুলা অংশগ্রহণ করা। কারণ নিয়মিত খেলাধুলা করলে আমাদের রক্ত চলাচল সঠিক থাকে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের মানসিক চাপ অভিশূন্যতা দূর হয়ে থাকে।
- খেলাধুলার আরেকটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক হচ্ছে এই খেলাধুলার মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে ও অন্যকে শ্রদ্ধা করতে শিখতে পারে।
শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা
মানব জীবনে সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে শরীরচর্চা ও খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত শরীর চর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ দূর হয়ে থাকে। যেমন: হৃদরোগ, ডাইবেটিস, ও কোলন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে মানুষজন তাদের উচ্চ রক্তচাপ সহ অতিরিক্ত ওজন কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পাশাপাশি সুস্থ জীবন গঠনে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা বিশেষভাবে আমাদের সাহায্য করে থাকে। যে সকল কাজে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা আমাদের উপকারে আসে সেই বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- শরীরচর্চা ও খেলাধুলা ছাত্র জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। শরীর চর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে থাকে।
- শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
- এটি আমাদের মানসিক প্রশান্তি আনতে ও সাহায্য করে থাকে।
- যাদের রাত্রে সহজে ঘুম আসে না, ডাক্তাররা তাদের শরীর চর্চা ও খেলাধুলার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এতে করে শরীরের বেশি ক্ষয় হয় ও শরীরে ক্লান্তি আসে। যার কারণে রাত্রে মানুষের সুন্দর ঘুম আসে।
- মাঝেমধ্যে বিনোদনের জন্যেও খেলাধুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- যারা রোগা বা পাতলা তারা শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদের দুর্বলতা দূর করতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং রোগমুক্ত জীবন যাপন করতে পারে।
- আপনারা যে যত বেশি শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করবেন তাদের শরীরের রক্ত চলাচলে তত বেশি উন্নত সাধন হবে। কারণ শরীরচর্চার ও খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রত্যেকটা অংশই নড়াচড়া করে। যার ফলে রক্ত চলাচল সুন্দর ও সহজ ভাবে হয়ে থাকে এতে কোন প্রকার বাধা আসে না। এতে করে আপনার শরীর হবে সুস্থ ও মজবুত।
লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকে আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আপনারা আরও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন এবং সেই বিষয়গুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন। তাহলে এরকম আরো নিত্যনতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসুন এবং সামনে আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ রইল। ততক্ষণ আপনারা সকলে সুস্থ থাকুন এবং ভালো থাকুন। সকলের শুভকামনা আদায় করে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিদায় নিচ্ছি।
সবাইকে ধন্যবাদ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url