বেগুন খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
বেগুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি? আজকে আমরা আর্টিকেলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা অনেকে আছেন যারা বেগুন খেতে ভালোবাসেন। আর এই সবজিটি সারা বছরই কম বেশি পাওয়া যায়। আজকের এই আর্টিকেল টি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন যে, বেগুন খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।
যেহেতু এই আর্টিকেলে বেগুন খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। সেহেতু আপনাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। তা নাহলে আপনারা এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে না জানা হয়ে যেতে পারেন। তাহলে চলুন আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
বেগুন পোড়া উপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই রয়েছে যারা বেগুনকে পুড়িয়ে খেতে ভালোবাসে। তারা বেগুনকে পুড়িয়ে বেগুনের ভর্তা করে কালায়ের রুটি দিয়ে খেতে বেশি পছন্দ করে। তবে আপনাদের অনেকেরই জানা নেই যে, বেগুন পুড়িয়ে খাওয়ার মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে নানান রকম উপকারিতা। যা খাওয়ার ফলে এটি আমাদের দেহের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পোড়া বেগুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- আমরা বেশিরভাগ সময় শীতকালে বেগুন পুড়িয়ে ভর্তা করে খেতে ভালবাসি। যেহেতু বেগুনের মধ্যে ভিটামিন এ, সি এবং ই এই সব ধরনের পুষ্টি রয়েছে। সেহেতু এসব পুষ্টি বজায় রাখতে বেগুনকে ভাজা করে না খেয়ে বেগুন পুড়িয়ে খাওয়া বা বেগুনের তরকারি করে খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
- পোড়া বেগুন খাওয়ার ফলে এটি আমাদের দেহের উচ্চ ক্লোরেস্টলের মাত্র কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- এটি খাওয়ার ফলে এটি আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে থাকে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকাই এটি আমাদের হজম শক্তি বাড়ায় এবং চিনির পরিমাণ শোষণ করে নেয়।
- পোড়া বেগুন খাওয়ার ফলে এটা আমাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
সাদা বেগুনের উপকারিতা
বেগুন তো আমরা সকলেই খাই। তবে আপনারা কি জানেন যে, সাদা বেগুন এর মধ্যেও পুষ্টিগুণাগুণ এবং এর উপকারিতা রয়েছে। আমাদের বাজারে মাঝে মাঝেই দেখা যায়। কিন্তু এর চাহিদা অনেক কম। তবে গুণের বহরের সাদা বেগুন বেগুনের চেহারার থেকে কম কিছু না। এর মধ্যে রয়েছে নানান রকম পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা এবং হয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সাদা বেগুন খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু।
- সাদা বেগুনের মধ্যে রয়েছে ডায়েরী ফাইবার প্রচুর পরিমাণে। পাশাপাশি এরমধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ পড়া তথ্য যা আমাদের শরীরে হট থেকে হাড়ের একাধিক রোগ প্রতিরোধে খুবই উপকারী উপাদান।
- সাদা বেগুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যার কারণে এটি আমাদের শরীরের স্ট্রেসের পরিমাণ কমায় এবং এটি আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
- সাদা বেগুনের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন যে, বেগুনি বেগুনের মতই সাদা বেগুনেও রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।
- সাদা বেগুনে উপস্থিত উপাদান পাচনতন্ত্রের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। ফলে এটি আমাদের গ্যাস বা অম্বলের মত সমস্যা থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
- সাদা বেগুনের মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদান আমাদের রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টরলকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে থাকে।
- সাদা বেগুন সবজিটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। ডাক্তাররা ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার কন্ট্রোলের জন্য সাদা বেগুন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বেগুন খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সবজি থাকে, তবে তার মধ্যে বেগুন কিন্তু অন্যতম। কারণ অন্যান্য সবজির তুলনায় এটি সহজে কাটা এবং রান্না করা যায়। আমরা বেগুন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন স্বাদের খাবার তৈরি করে থাকি। তবে আপনারা বেগুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনারা এটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করে দেবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক বেগুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- বেগুনের মধ্যে ম্যাগনেসি, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, এবং কপারের মতো আরও বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। যে উপাদান গুলো আমাদের হারকে সুস্থ রাখতে এবং হাড়ের মধ্যে খনিজের ঘনত্ব বাড়াতে বিশেষ ভাবে উপকারী।
- এটি আমাদের রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- বেগুনের মধ্যে রয়েছে অ্যাহ্নোসায়ানিন নামক যৌগ যা আমাদের কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আবার এই সবজিতে অনেক বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে যেগুলো আমাদের ক্যান্সারের কোষের সঙ্গে লড়াই করে।
- বেগুনকে ভালো করে ভেজে এর সাথে মধু মিশিয়ে রাত্রে তা চেটে খেলে যাদের রাত্রে ঘুম কম হয় তাদের এটি করার ফলে তাদের সুন্দর ঘুম আসবে।
- লিভারের মতো সমস্যা বা লিভার বেড়ে গেলে কচি বেগুন ভালো মতো ভেজে রোজ সকালে খালি পেটে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- মহিলাদের মাসিক সমস্যা দেখা দিলে বেগুনের ভর্তা বা বেগুনের তরকারি অথবা বেগুনের ভাজি রুটি বা ভাত দিয়ে খেলে অনেক উপকারে আসবে।
- বেগুনের মধ্যে সামান্য পরিমাণে নিকোটিন থাকে যা, ধূমপায়ীদের ধূমপান ছড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- বেগুন খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের জিংকের অভাব দূর করতে সাহায্য করে।
- বেগুনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্ত উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
বেগুন খাওয়ার অপকারিতা
বেগুন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। কারণ সব কিছুরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বেগুন সবজিটিও এর বাইরে না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বেগুন কাদের জন্য ক্ষতিকারক বা খাওয়া উচিত নয়।
- যাদের পেটের সমস্যা বা এসিডিটি রয়েছে তারা যদি বেগুন খান তাহলে আপনাদের পেটে ব্যথা, বমি, মাথাব্যথা সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- আমাদের অনেকেরই বেগুনে এলার্জি রয়েছে। তাই যাদের বেগুনে এলার্জি রয়েছে তারা বেগুন খেলে আপনাদের চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এজন্যই যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা বেগুন খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
- আমাদের যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তারা যদি বেগুন খান তাহলে বেগুনের থাকা অক্সালেট নামক একটি উপাদান রয়েছে যেটি আমাদের কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। তাই কিডনি রোগীদের জন্য বেগুন খাওয়া মোটেও উচিত হবে না।
- যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ বেগুন খাওয়ার ফলে তাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আরো কমে যেতে পারে। যার কারণে তাদের সমস্যা কম হওয়ার বদলে আরো বেড়ে যেতে পারে।
বেগুন কাদের এড়ানো উচিত?
আমরা সকলেই জানি বেগুন একটি সহজলভ্য এবং পুষ্টিতে ভরপুর এক ধরনের সবজি। এই সবজিটি আমরা অনেকেই খেতে ভালোবাসি। আর বেগুন দিয়ে বানানো যায় হাজারো রকম খাবারের আইটেম। সেগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু এবং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে এটি আমাদের সবার জন্য খাওয়া উচিত হবে না। কারণ বেগুনে অনেকেরই চুলকানি, গলা ব্যথা, টক লাল হওয়া, বমি বমি ভাব এবং এলার্জির মত সমস্যা যাদের দেখা দেবে তাদের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
যারা নিয়মিত হজমের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিক এর মত সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য বেগুন এড়িয়ে চলা উচিত। তা নাহলে বেগুন খাওয়ার ফলে এটি আপনাদের বদহজমের কারণ হতে পারে। আর এটি যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের তো একদমই এটি হওয়া উচিত হবে না। আর যদি ভুলবশত এটি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই কিডনির সমস্যা থাকাকালীন খেয়ে ফেলেন তাহলে এটি আপনাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা
আমরা তো শুধু জানি যে, বেগুন খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। তবে আপনারা এটা জানেন কি যে গর্ভাবস্থায় বেগুন আমাদের কি সব উপকারে আসে? আমাদের পুরো এশিয়া মহাদেশ জুড়েই সারা বছর বেগুন এর আমদানি ও রপ্তানি হয়ে থাকে। আর এই বেগুনের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগণ যা মা ও গর্ভস্থ সন্তানের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- গর্ভাবস্থায় বেগুন খেলে এটি হবু সন্তানের রোগ জ্বালার সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয়।
- বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, নিয়েসিন, বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন এ রয়েছে। তাছাড়াও এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে খনিজ প্রদান রয়েছে। আর এই সকল উপাদান ভ্রূণের রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়।
- গর্ভকালীন অবস্থায় যদি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগেন তাহলে আপনারা বেগুন খাওয়ার ফলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন এবং এটি গর্ভস্থ সন্তানকে পুষ্টি দিয়ে থাকে।
- বেগুন খাওয়ার ফলে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং গর্ভবতী মহিলাদের সম্মুখীন হতে পারে এমন অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
- বেগুনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান যেটি খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সহ হত্যা করে এবং মা ও শিশুর উভয়ের রক্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেল টি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বেগুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা বেগুনের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনে উপকৃত হয়েছেন। আজকের এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। আর যেহেতু আমার এই ওয়েবসাইটটিতে প্রতিদিন নতুন নতুন আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করা হয়। সেহেতু আপনারা চাইলে আমার এই ওয়েবসাইটটিকে ফলো করতে পারেন। এই বলে আজকের মত বিদায় নিলাম আপনাদের শুভ কামনা জানিয়ে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url