টমেটো খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা।

টমেটো সাধারণত শীতকালীন ফল। কিন্তু বর্তমানে এটি সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। আর আমরা এটিকে সালাত হিসেবে বা বিভিন্ন তরকারি রান্নায় টমেটো দিয়ে সেটিকে সুস্বাদু করে তুলি। আজকের এই আর্টিকেলে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
লাল টমেটো
এইখানে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরা হবে। তাই আপনাদের এটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। তাছাড়া আপনারা বিভিন্ন বিষয় ছেড়ে যেতে পারেন।

টমেটো খাওয়ার নিয়ম

আমাদের সমাজে টমেটো খায় না এরকম মানুষ নেই বললেই চলে। কারণ এটিকে অনেকেই সবজি হিসেবে খায় আবার অনেকেই ফল হেসে বও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতের সময় এটি বাজারে ব্যাপক হারে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। টমেটো একটি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। তবে এটিকে ফরমালিন বা বিভিন্ন সার দিয়ে পাকানো হয়। তাই টমেটো খাওয়ারও কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। যে নিয়ম কানুন গুলো মেনে খেলে এটি আমাদের শরীরে কোন ধরনের সাইড ইফেক্ট পড়তে দিবে না। তাহলে চলুন সেই নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • টমেটোকে আমরা সালাদ করে খেতে পারি। আর আমাদের সবারই পছন্দের খাবার হচ্ছে এই টমেটোর সালাদ। তাই আমরা চাইলে টমেটোর সালাদ করে খেতে পারি যা অত্যান্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার।
  • আমরা টমেটোকে বিভিন্ন তরকারির সাথে এক থেকে দুই টমেটো মিশিয়ে রান্না করতে পারি। এর ফলে তৈরিকৃত তরকারিটি খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে ওঠে।
  • টমেটোর স্যুপ হচ্ছে সবচেয়ে সুস্বাদু একটি খাবার। আর এটির মধ্যে রয়েছে পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার।
  • আমরা চাইলে টমেটোর জুস করে খেতে পারি।
  • আর আমাদের খাবারের বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে টমেটো সস অতি পরিচিত একটি খাবার। এই টমেটো সস আমরা বিভিন্ন পাসপোর্ট খাওয়ার সময় মিশিয়ে খায় যেটি খেতে খুবই সুস্বাদু।
  • আর আমরা সকাল বেলায় খালি পেটে টমেটো খাওয়ার অভ্যাস করতে পারে। এভাবে খাওয়ার ফলে এটা আমাদের এসিডিটি দূর করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

টমেটো কাদের খাওয়া উচিত নয়?

আমরা সকলেই জানি যে, টমেটো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। এটি আমাদের বাজারে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। টমেটোর মধ্যে রয়েছে একাধিক ভিটামিন ও খনিজের ভান্ডার এবং এর মধ্যে আর রয়েছে তা হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবুও এই সবজিটি সবার জন্য স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। এমনকি কিছু মানুষের জন্য টমেটো খাওয়ায় তাদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক টমেটো কাদের জন্য খাওয়া বিপদজনক হতে পারে।
  • যারা আই বি এস নামক একটি জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের টমেটো এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ টমেটোতে থাকা ফাইবার এই রোগীদের অস্থিতিশীল করে তোলে যার ফলে তাদের ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, এবং বমির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • টমেটো সবজিটি খাওয়ার ফলে যাদের কিডনিতের পাথর রয়েছে তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। এজন্যই কিডনিতে পাথর হওয়া রোগীরা টমেটো খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন।
  • আবার অনেক সময় টমেটো খাওয়ার ফলে কারো কারো মধ্যে এলার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই যাদের এরকম সমস্যা দেখা দিবে তারা টমেটো বা টমেটো দিয়ে তৈরি যে কোন খাওয়ার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • তাছাড়াও অতিরিক্ত টমেটো খাওয়ার ফলে এটি আমাদের বাতের সমস্যা কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • মেয়েদের পিরিয়ডের সময় টমেটো খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, টমেটো সস বা টমেটো সেদ্ধ এবং টমেটো স্যুপ খেলে এটি রক্তপাতের প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

টমেটো খাওয়ার উপকারিতা

টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
টমেটো ফলটি পুষ্টিতে ভরপুর। এটিকে আমরা চাইলে কাঁচা অবস্থায় রান্না করে বা জুস ও সস হিসেবেও খেয়ে থাকে। অনেকে আবার এটিকে সালাদ হিসেবে বানিয়েও খায়। টমেটো খাওয়ার মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে দেয়। টমেটোর আরো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে চলুন সেইসব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • টমেটোর মধ্যে রয়েছে মিনারেল যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং এটি আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে।
  • টমেটো খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের হার্ট কে সুস্থ রাখে।
  • টমেটো খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখে। কারণ এটি আমাদের রক্তে থাকা শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • টমেটো সালাদ বা জুস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের ক্যান্সার রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে থাকে।
  • টমেটোর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। যেটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং এটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও খুবই উপকারী একটি ফল বা সবজি।
  • টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন থাকায় এটি আমাদের হারকে মজবুত করে। পাশাপাশি এটি আমাদের হাড়ের ক্ষয় থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
  • যারা সব সময় রোগা অবস্থায় বা শরীর দুর্বল থাকে তারা সকল বিকাল পাকা টমেটোর সালাদ বা রস খেলে এ সকল সমস্যা দূর হয়ে যায়।

টমেটো খাওয়ার অপকারিতা এবং সতর্কতা

টমেটো খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা থাকলেও এটির সাথে কিছু অপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ আমরা সকলেই কমবেশি টমেটো খেতে ভালবাসি। এজন্যই আমাদের সতর্কতার সাথে টমেটো খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। সাধারণত টমেটো খাওয়ার কোন ধরনের উপকারিতা নেই। কিন্তু টমেটো বেশি খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই টমেটো খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

খুবই কম সংখ্যক মানুষ রয়েছে যাদের টমেটোতে এলার্জি রয়েছে তবে তাদের জন্য এই টমেটো খাওয়া তাদের শ্বাসকষ্টেরও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও যাদের হৃদ রোগের আক্রান্ত তারা ঔষধ সেবনের করার পর টমেটো খাওয়ার বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। কারণ এটি ওষুধের সাথে মিশে এটি দেহে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করতে পারে। 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমরা অবশ্যই টমেটোর উপকারিতা এবং অপকারিতা জেনে তারপরে খাওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।

গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা

আমরা সকলেই জানি যে, টমেটো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। পাশাপাশি টমেটো গর্ব অবস্থায় খাওয়াও অনেকটা নিরাপদ। যদি এটি পরিমিতভাবে খাওয়া যায় তাহলে। গর্ভবতী মহিলাদের এ সময় ভিটামিন, ফোলেট, লাইকোপিন এবং আয়রনের দরকার পড়ে। আর এই সকল গুণগুলো টমেটোর মধ্যে পাওয়া যায়। তাই গর্ভবতী অবস্থায় টমেটো খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
  • একটি মাঝারি সাইজের টমেটোতে দৈনিক ভিটামিন সি এর ৪০% এবং ভিটামিন এ এর 20% পাওয়া যায়। যা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য খুবই উপকারী।
  • টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি বদহজম থেকে রক্ষা করে। ফলে এটি মলের পরিমাণ বাড়ায় এবং পাচক এনজাইমের নিঃসরণ বাড়ায়।
  • গর্ভবতী মহিলাদের ক্লান্তি বা দুর্বলতা দূর করতে টমেটো খুবই উপকারী একটি সবজি বা ফল।
  • টমেটো গর্ভবতী মহিলাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ত পরিশোধনে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।
  • টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে রয়েছে যা রক্ত ক্ষয় রোধ করে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও রাস করে থাকে।
  • টমেটোর মধ্যে একটি শক্তিশালী এক্সিডেন্ট রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের শিশুদের কোষের ক্ষয় এবং জন্মগত অক্ষমতা প্রতিরোধ করে।
  • টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে বলে এটি মূত্রনারীর সংক্রমণের প্রকল্পকে হ্রাস করে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা নিয়মিত টমেটো খাওয়ার ফলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চাপকে কমাতে সাহায্য করে।

লাল টমেটোর উপকারিতা

লাল টমেটোর উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী আপনারা যদি নিজেদের খোদা বাড়াতে চান তাহলে লাল টমেটো খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন ও ফলিক অ্যাসিড আর এই সকল উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর এই লার টমেটোর চাহিদা শুধু আমাদের দেশেই না পুরো বিশ্বে এর চাহিদা বিপুল পরিমাণে রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক লাল টমেটোর উপকারিতা। যেটি জানার পরে আপনারা নিয়মিত লাল টমেটো খাওয়া শুরু করে দিবেন।
  • প্রথমত আমরা লাল টমেটোকে সালাদ হিসেবে বা রান্নাই তরকারিতে দিয়ে খেয়ে থাকি। যার কারণে এটি শুধু মুখের স্বাদ বাড়ানোর জন্য দেওয়া হয় এমন কিন্তু না, টমেটোতে রয়েছে এমন কিছু পুষ্টিগুণ যা অন্য কোন সবজিতে পাওয়া যাবে না।
  • লাল টমেটোর শরীরের ওজন ও চর্বি কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। যার কারণে যাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা চাইলে নিয়মিত লাল টমেটো খেতে পারেন।
  • লট টমেটোর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস আর এই সকল পুষ্টিগুণ থাকায় টমেটো খাওয়ার ফলে আপনি পেয়ে যাবেন শরীরকে সুস্থ রাখার একটি চাবিকাঠি।
  • লাল টমেটো রস মুখে লাগালে এটি আমাদের মুখের সমস্ত কালো দাগ তুলতে সাহায্য করে।
  • যারা ধূমপানে আসক্ত তাদের জন্য টমেটো একটি অসাধারণ খাবার। প্রতিদিন ধূমপানের ফলে আপনার শরীরে যতটা ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করে এই লাল পাকা টমেটো।
  • চর্ম রোগের ব্যক্তিদের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকরী একটি সবজি। লাল পাকা টমেটোর রস চর্মরোগ নিরাময়ের কাজ করে থাকে।
  • নিয়মিত লাল টমেটো খাওয়ার ফলে এটা আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি আমাদের টককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা টমেটোর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। আরও এ ধরনের বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার ওয়েবসাইটিতে ঘুরে আসুন এবং এটিকে ফলো করুন। এই বলে আজকে আপনাদের মাঝে বিদায় নিলাম। আবারও দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে। সেই পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url