গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না? তা নিয়ে আলোচনা।

এই পৃথিবীতে সবচেয়ে আনন্দের ও সুন্দরময় প্রথম অনুভূতি হল পিতা মাতা হওয়ার অনুভূতি। আর এই সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের বেশি যত্নবান হতে হয়। গর্ব অবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলা বিভিন্ন ধরনের নিয়ম কানুন মেনে চলে। তারা এই সময় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খায় আবার বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাদের সন্তানের জন্য। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না সেই সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
আজকেরে আর্টিকেলে আপনারা করভাস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আপনাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। তা না হলে আপনাদের অনেক কিছুই না জানা থেকে যেতে পারে।

গর্ভবতী অবস্থায় করণীয় কি?

গর্ভবতী মহিলারা যখন গর্ভধারণ করে তখন তারা তাদের নিজের প্রতি খুবই বেশি খেয়াল রাখে। তারা চায় যে তাদের সন্তান যেন সুস্থ-সবল ভাবে এই পৃথিবীতে আসতে পারে। এইজন্য তারা তাদের নিজের প্রতি খুবই বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে। যাতে করে তাদের সন্তানের কোন ধরনের ক্ষতি না হয়। এজন্য তারা তাদের খাওয়া দাওয়া চলাফেরার সবকিছুর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে শুরু করে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী অবস্থায় একজন মহিলার যেসব করণীয় রয়েছে সেই সব নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  • গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার প্রথম করণীয় হচ্ছে গর্ভধারণের আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলা এবং তার প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ও রোগ বালাইয়ের চিকিৎসা করে নেওয়া।
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সব সময় সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও তাদের প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও দুর ডিম খেতে হবে তাদের স্বাস্থ্য কে সুস্থ সবল রাখতে।
  • গর্ভবতী অবস্থায় প্রথম দুই থেকে তিন মাস অতি ভারী বা অতিরিক্ত কাজকর্ম থেকে দূরে থাকা। তা না হলে বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো দরকার। তাদের প্রতিদিন দিনে ৮ ঘন্টা মত ঘুমানো আবশ্যক।
  • গর্ভকালীন অবস্থায় প্রথম দুই তিন মাস দূরে কোথাও ভ্রমণ না করাই উত্তম হবে। তবে শরীর ও মন প্রফুল্লর জন্য অতি সকালে সূর্যের হালকা আলোতে হেঁটে বেড়াতে পারে।
  • গর্ভকালীন অবস্থায় কোন ধরনের মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা কোন ধরনের স্ট্রেস নেওয়া যাবে না। কেননা এতে সন্তানের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না

গর্ভকালীন অবস্থা হচ্ছে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় একজন মহিলার জন্য। এই সময়ই নাররা তাদের শারীরিক ও মানসিক এর পরিবর্তন দেখা দিয়ে থাকে।এ সময় তারা নিজের সাথে সাথে তার গর্ভে আসা নতুন আরেকটি প্রাণের জন্য সে তার শরীরের বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকে। তাই এ সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিছু ফল এড়িয়ে চলতে হবে। নিচে গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • প্রথমত গর্ভাবস্থায় আপনাদের আনারস এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা এই ফলটি খাওয়ার ফলে জরায়ুতে তীব্র সংকোচন হতে পারে। এর ফলে গর্ভপাত ও ঘটতে পারে। এজন্যই আপনারা অবশ্যই গর্ভকালীন অবস্থায় আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • গর্ভকালীন অবস্থায় আপনাদের অবশ্যই আঙুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এর মধ্যে রয়েছে একটি বিষাক্ত রেজভেরট্রোল যেটি গর্ভবতী মহিলাদের হজমের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
  • গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের টক জাতীয় খাবার খেতে খুবই ইচ্ছা করে। তবে এই সময় তেতুল খাওয়া তাদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। যার জন্য গর্ভবতী নারীদের তেতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের যাদের কলাতে এলার্জি বা ডায়াবেটিস রয়েছে তারা এই কলা ফলটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • খেজুর একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টির গুণ সম্পন্ন একটি ফল। কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই ফলটি খাওয়া উচিত না। কারণ খেজুর খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের শরীরের তাপমাত্রা দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেখা দেয় শরীরে নানা রকম সমস্যা।
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফ্রিজে বরফের জামা বা অতিরিক্ত ঠান্ডা বেরি খাওয়া মা ও সন্তান দুজনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

একজন মা ই জানে সে তার সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখাতে কত কিনা করে থাকে। কারণ একজন মায়ের মা ডাক সোনাটি সব চেয়ে সুন্দরতম ও মধুময় অর্জন। আর তার জন্যই গর্ভধারণ করার পর থেকেই মেয়েরা দশ মাস অনেক কষ্ট, সর্তকতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তার সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখায়। তাই গর্ভবতী মা এর জন্য কি কি সবজি তাদের জন্য ক্ষতিকারক বা কি কি তাদের গর্ভকালীন অবস্থায় খাওয়া যাবে না সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তা নিয়ে আলোচনা
  • আমরা জানি করলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। তবে গর্ভাবস্থায় করলা খেলে এটি হতে পারে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতির কারণ। এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলাইসিস ও মেরোডিসিন নামক পদার্থ যা একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে না খাওয়াই ভালো। আমেরিকান গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছে যে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি মেয়েদের জরায়ুর শক্তিশালী বেশি ও গ্রন্থি সংকোচন করে থাকে। যার ফলে মেয়েদের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • গর্ভকালীন অবস্থায় যাদের বেগুনে এলার্জি রয়েছে তারা অবশ্যই বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • আমরা জানি এলোভেরা আমাদের ত্বক বা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। আমরা এলোভেরার জুস করে নিজেদের সৌন্দর্য ও পেট পরিষ্কার করার জন্য খেয়ে থাকি। তবে গর্ভাবস্থায় সন্তানের সুস্বাস্থ্যও বিবেচনা করে এলোভেরা পরিত্যাগ করা উচিত।
  • গর্ভাবস্থায় অবশ্যই সজিনা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • গর্ভাবস্থায় মেয়েদের আরও কিছু সবজি যেমন সিম, অঙ্কুরিত বীজ, কাঁচা মুলা ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

কি কি খাবার খেলে বাচ্চা সুস্থ থাকে?

গর্ভকালীন অবস্থায় মেয়েদের অবশ্যই তার নিজের ও তার সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য নানান রকম পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। কারণ আমরা সকলেই চাই যে আমাদের সন্তান যেন এই পৃথিবী সুস্থ সবল ভাবে জন্মগ্রহণ করতে পারে। এজন্যই গর্ভধারণকারী মেয়েরা তাদের সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। নিচে গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খেলে বাচ্চা সুস্থ থাকবে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • প্রথমত গর্ভ ধারণ কারি মায়ের প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের জন্য প্রতিদিন দুধ ও ডিম খাওয়া খুবই জরুরী। কারণ এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম যা যা গর্ভবতী মেয়েদের ও তাদের সন্তানের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • প্রতিদিন আমিশের ঘাটতি পূরণ করার জন্য মাছ বা মাংস দুটোই খাওয়া জরুরি।
  • শরীরকে সুস্থ রাখতে ও সন্তানের সুস্বাস্থ্য রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়া উচিত।
  • দেহের শক্তি বা এনার্জি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়

পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষই চাই যে তার সন্তান যেন জন্মের সময় সুন্দর ও ফর্সা হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আর এজন্য মেয়েরা নানারকম পথ অবলম্বন করে থাকে। তবে গর্ভধারণ অবস্থায় যেসব খাবার তাদের বাচ্চার বর্ণ ফর্সা করতে পারে এমন কিছু প্রাকৃতিক খাওয়ার তাদের খাওয়া উচিত। এতে তাদের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়।
গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় দুধ পান করা খুবই জরুরী। শরীরের পুষ্টি পূরণের পাশাপাশি এটি বাচ্চার ত্বকের রং ফর্সা করতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ত্বকের রং ফর্সা করতে চেরি ওবেরি জাতীয় ফল খুবই উপকারী একটি খাবার। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চা বাচ্চার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • বাচ্চার ত্বকের রং ফর্সা করতে কমলা ফলটিও বেশ উপকারী একটি খাবার। কমলা ফলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি যা শিশুর শরীর গঠনে ও শিশুর ত্বক ভালো রাখতে বিশেষ উপকারে আসে।
  • আপনারা চাইলে টমেটো খেতে পারেন। এটি শিশুকে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ক্ষতিকারকক আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
  • গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, যেসব নারীরা গর্ভধারণ এর পর থেকেই খাবারের সাথে বিয়ের পরিমাণ বেশি মাত্রায় খায় তাদের বাচ্চার বর্ণ উজ্জ্বল হয়।
  • বাচ্চাকে জন্মের সময় তার রং ফর্সার জন্য আপনারা চাইলে তিন মিলি মৌরি ভেজানো পানি প্রতিদিন সকালে খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া উচিত

একজন মেয়ের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর ও মধুময় সময় হচ্ছে যখন সে প্রথম মা হয়। এজন্য সে গর্ভধারণ করার পরপরই তার নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হয়। জীবনের সব পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে গর্ভাবস্থায় এটি বিশেষভাবে জরুরি। কারণই সুষম খাবার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এই সময় গর্ভবতী নারীদের ভিটামিন ও খনিজ দরকার হয়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভ অবস্থায় আমাদের যেসব খাবার খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া উচিত
  • মেয়েদের গর্ভধারণ করার পর তাদের শরীরের পুষ্টি ও ভিটামিন খাবারের জন্য ফলমূল খাওয়া জরুরী।
  • গর্ভাবস্থায় প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে যেমন ডিম, মাংস, মাছ দুধ ইত্যাদি খেলে নারী ও তার সন্তানের দুজনেরই স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  • গর্ভ অবস্থায় একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।
  • গর্ভাবস্থায় শিশুর প্রোটিন বৃদ্ধির জন্য নারীদেরকে হাঁস-মুরগি, নদীর মাছ ও হাঁসের ডিম খাওয়া উচিত। কারণ এইসব খাবারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যেগুলো শিশুর ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় বাচ্চা যাতে সুন্দর ও সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসতে পারে সেই জন্য নারীদেরকে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
  • এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য শাক-সবজি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • গর্ভাবস্থায় নারীরা চাইলে লেবুর শরবত করেও খেতে পারে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন খনিজ পদার্থ যা মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়তা করে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজকে আপনারা এই ব্লগটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে গর্ভাবস্থায় নারীদের কি কি সবজি খাওয়া যাবে না সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জেনেছেন। আপনারা এই ব্লগটিতে গর্ভবতী মহিলারা কি খাবে বা তাদের কি খাওয়া উচিত এই সকল বিষয় সম্পর্কে জেনেছেন। তাহলে এরকম আরো নিত্য নতুন ব্লগ বা আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনারা আমার ওয়েব সাইটটি ফলো করতে পারেন। কারণ আমার এই ওয়েবসাইটটিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আর্টিকেল উপস্থাপন করা হয়। আজকের মত এখানেই আপনাদের শুভ কামনা দিয়ে বিদায় নিলাম। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url