নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয়? তা নিয়ে আলোচনা।

নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয় এই সম্পর্কে আপনাদের অনেকেরই ধারণা নেই। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন নিম পাতার গুঁড়া খেলে আমাদের কি হয় বা কি উপকারে আসে। আপনি যদি নিয়মিত নিম পাতার গুঁড়া পানির সাথে খান তাহলে আপনারা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারবেন এটি আপনাদের কি রকম উপকারে আসে।
নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয়
নিম পাতার গুড়ায় রয়েছে নানান ধরনের পুষ্টিগণ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার গুড়া খেলে আমাদের কি হয়। সাথে আপনারা এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। কারণ এইখানে নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয় সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

নিম গাছ কি কি রোগের প্রতিকার করে?

নিম গাছের ব্যবহার বাংলাদেশ সহ আমাদের পুরো উপমহাদেশেই কত ৫ হাজার বছর ধরে হয়ে আসছে। আর এইসঙ্গে নিম গাছকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে নানান রকম ঔষধ। এখন পর্যন্ত নিম গাছকে কাজে লাগিয়ে ১৩০টি ঔষধি গুণ বার করা হয়েছে। আর এই সকল ঔষধি গুন গুলো আমাদের দেহের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে খুবই কার্যকরী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম গাছকে কাজে লাগিয়ে আমরা কি কি রোগের প্রতিকার করতে পারি।
  • আমরা যে কোন ক্ষত স্থান বা ঘা হওয়ার স্থানে নিম পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে সেই ক্ষত বা ঘা হওয়ার স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারি। এতে আমাদের দ্রুত ক্ষত এবং ঘা দুটোই ঠিক হয়ে যায়।
  • আমাদের যাদের মাথায় প্রচুর পরিমাণে খুশকি রয়েছে। তারা চাইলে নিয়মিত নিমপাতা কে পানির সাথে সেদ্ধ করে ঠান্ডা হওয়ার পর এটি আমরা মাথায় শ্যাম্পু করে সেই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে মাথা পরিষ্কার করতে পারি। এতে আমাদের মাথায় অনেক খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
  • নিম গাছের পাতাকে বা নিমের ফলকে গুনাহ করে আমরা পেস্ট বানিয়ে আমাদের ত্বকের ব্রণে লাগাতে পারি। এতে আমাদের মুখে ব্রণ সহ বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করে থাকে।
  • আমরা চাইলে নিম পাতার গুড়ুক কে হলুদের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারি। এতে আমাদের ত্বক হয় উজ্জ্বল এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের গর্ত কালো দাগ হয়ে থাকে।
  • আমরা নিয়মিত নিম পাতার গুড়কে পানির সাথে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারি। এর ফলে আমাদের সকলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে কি হয়?

আমরা সকলেই জানি যে, নিমপাতার রস আমাদের জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এই রস খেলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা দূর হয়ে থাকে। আবার কথায় আসে যে নিম গাছের হাওয়াও আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। নিচে নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • প্রথমত বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে নিম পাতার রস এ রয়েছে এস মিটানস, ই ফ্যাসালিস এবং এস ওয়ারিয়াস এর মত বিভিন্ন উপাদান যেগুলো আমাদের দেড় ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
  • আমাদের যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে নিয়মিত নিমপাতা রস খেতে পারেন। এটি আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল ত্বরান্বিত করতে সক্ষম।
  • নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে আমাদের হজম শক্তিও বেড়ে যায়। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত নিম পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে বাঁচতে পারেন।
  • অনেকেই আছেন জন্ডিস রোগে ভুগছেন তারা এই রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনাদের জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম।
  • নিয়মিত নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে আমাদের পেট থাকে পরিষ্কার। ফলে নিম পাতার রস আমাদের কৃমি সমস্যা থেকেও বাঁচতে সাহায্য করে থাকে।
  • নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে এটি আমাদের ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও এটি আমাদের বয়সের ছাপ পড়া থেকেও বাঁচতে সাহায্য করে থাকে।
  • নিম পাতার রস এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ভাইরাস হিসেবেও কাজ করে থাকে। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয়

আমরা সকলেই জানি যে, নিম পাতার গুড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম পাতার ঘোড়াকে পানির সাথে মিশিয়ে খেলে এটি আমাদের বুকে ব্যথা বা আমাদের বুকে অনেক সময় ধরে কফ জমে থাকলে সেটি সারাতে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি নিমের পাতার গুড়ার পেস্ট বানিয়ে আমরা মাথায় ব্যবহার করতে পারি উকুন নাশ করার জন্য। তাছাড়াও নিমের পাতার গুড়াকে কাজে লাগিয়ে আমরা শরীরে চুলকানি ভালো করার জন্য ব্যবহার করতে পারি। 
নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয় তা নিয়ে আলোচনা
আমরা নিয়মিত নিম পাতার গুড়াকে সুগার লেভেল কমানোর জন্য খেতে পারি। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা তাদের জন্য নিম পাতার গুড়া ঔষধের চেয়েও ভালো ফলাফল দিয়ে থাকে। তাছাড়াও এটি আমাদের শরীরের রক্তে চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং এটি আমাদের শরীরে এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। আমরা নিম পাতার গুড়াকে আমাদের চুলের জন্য ব্যবহার করতে পারি।

এটি আমাদের চুলকে করে শক্তিশালী এবং মজবুত। সাথে এটি আমাদের চুলকে করে স্বাস্থ্যকর এবং ঘন। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে নিম পাতার গুড়া খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই ও আমাদের শরীরের সুস্বাস্থ্য গঠনে বিশেষভাবে উপযোগী। 

ডায়াবেটিস হলে কি নিম পাতা খাওয়া যাবে?

আমরা সকলেই জানি যে ডায়াবেটিস খুবই মারাত্মক একটি রোগ। আর আমরা এই ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করার জন্য কত কিনা করে থাকি। তা না হলে এই ডায়াবেটিস থেকেই আমাদের আরও বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। তাই এই ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু আপনারা সকলেই চেনে চমকে যাবেন যে নিমপাতা কিন্তু আমাদের এই ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে খুবই উপকারী। 

নিম পাতার রস তৈরি করে নিয়মিত খেলে এটি আমাদের ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন্স হরমোন কম বের হয়। যার ফলে রক্তের শর্করা পরিমাণ বাড়তে থাকে। পরিমাণ কমানোর জন্য আমাদের নিম পাতা খাওয়া জরুরী। এটি আমাদের রক্তের শর্করা পরিমাণ কমতে সাহায্য করে থাকে। 

কারণ এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোসাইড, ও ফ্ল্যাভানয়েডস এই সকল উপাদান রক্তে মিশে রক্তের শর্করা লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই প্রতিদিন সকালে এই নিম পাতাকে চিবিয়ে খেলে আমাদের এই ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে চলে আসে। এজন্যই বলা হয়ে থাকে যে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলের জন্য নিম পাতা একটি মহা ঔষধ।

নিম খেলে কি রক্তচাপ বাড়ে?

আমাদের দেশে প্রায় শতকরা ৯৫ শতাংশ মানুষই এই রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন। আর এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু অনিয়ম ও বদঅভ্যাস জনিত  খাবার খাওয়ার কারণে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত কায়িক শ্রম, অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া, এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণেই আমাদের এই রক্তের চাপ সমস্যা বেড়ে চলেছে। আর চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এই সকল অনিয়ম নীতি মেনে চলার কারণেই আমাদের দেশের ছোট বাচ্চাদের রক্তের চাপ দেখা দিচ্ছে।

কিন্তু এই রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের নিম খাওয়ার বিকল্প কিছুই নেই। বিশেষজ্ঞরা জানান যে নিম পাতার মধ্যে রয়েছে এন্টিহিস্টামিন যেটি আমাদের রক্তনালী সচল রাখতে সাহায্য করে। সাথে এটি আমাদের রক্তে জমাট বাঁধতেও দেই না। নিম পাতার নির্যাস আমাদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। 

কারণ এটি আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে থাকে যার কারণে আমাদের হার্ট সচল থাকে। ফলে রক্তচাপ কমে যায়। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমাদের শরীরের রক্তচাপ কমাতে নিম এর গুরুত্ব অপরিসীম।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

আমরা সকলে একটি বিষয় জানি যে, কোন কিছুই অনিয়ম মেনে বা খাওয়া বা প্রয়োজনের বেশি খাওয়া আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্য দুটো জন্যই খুবই ক্ষতিকর একটি বিষয়। নিম পাতার নানান ধরনের উপকারিতা ও ঔষধি গুণ থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর রয়েছে। যেগুলো আমাদের পরিহার করা অত্যন্ত জরুরী। নিচে নিম পাতার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হলোঃ
নিম পাতার ক্ষতিকর দিক
  • প্রথমত খালি পেটে বেশিদিন নিম পাতা খেলে এটি আমারে আমাদের বিপরীত ধর্মী কাজ করতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন নিমপাতা খেলে এটি খাওয়ার পর বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • নিম পাতা কিন্তু গর্ভবতী, শিশু ও মৃতদের জন্য খাওয়া নিষেধ। কারণ এটি তাদের শরীরকে রোগা বানিয়ে দিতে পারে।
  • যাদের কিডনি বা লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিমপাতা খাবেন না। না হলে এতে লাভ এর চেয়ে আপনাদের ক্ষতি বেশি হবে।
  • তাছাড়াও যাদের নিম পাতা ব্যবহারের ফলে ত্বকে এলার্জি দেখা দেয় তারা নিমপাতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • দীর্ঘদিন ধরে নিম পাতা অত্যাধিক সেবন করার ফলে এটি আমাদের ইলেক্ট্রোলাইট এর ভারসাম্য ধরে রাখতে ব্যাহত হয় ফলে কিডনিতে চাপ পড়ে। যার কারণে কিডনির জটিলতা বেড়ে যায়।

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন যে নিম পাতার কিছুটা ক্ষতিকর দিক থাকলো এটি অনেকাংশে আমাদের জন্য উপকারী। যা আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। আর আপনারা এতক্ষণ সময় ব্যয় করে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের আরো বিভিন্ন রকম আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমার এই ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসুন। 

আপনাদের এই মূল্যবান সময়টুকু দেওয়ার জন্য আবারো জানাই আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। এভাবেই আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদের সাপোর্ট করুন। এই নিয়ে আজকের মত আপনাদের মাঝে বিদায় নিলাম সকলের সুস্থ সবল জীবন যাপনের দোয়া কামনা করে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url