১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য সম্পর্কে আজকে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানবো। তাছাড়াও আপনারা যারা ১৯৬৯ সালের গণঅবস্থানের কারণ বা তাৎপর্য সম্পর্কে জানেন না। সাধারণত তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। এজন্যই এই আর্টিকেলটি আপনাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য কি ছিল? এ সম্পর্কে যদি না জেনে থাকেন তাহলে আপনারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানা নেই। তাহলে চলুন এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যায়।

ভূমিকা

বাঙালি জাতির অভিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব সহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাংলার সাহসী পুরুষদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ফলে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। এ অভুত্থান স্বৈরাচারী আইয়ুবের পতন ঘটিয়ে তার সকল স্বপ্নস্বাধকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এজন্য বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান অতীবক গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। এ অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ

নিচে 1969 সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ আলোচনা করা হলোঃ

সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা

পূর্ব বাংলারবিত্ত শ্রেণীর স্বার্থকে সংরক্ষণ করার জন্য ছয় দফা কর্মসূচি রচিত হয়েছিল। কিন্তু ১১ দফা কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল পূর্ব বাংলার ছাত্র-ছাত্রী সহ কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা। মূলত দেশের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীর লক্ষ্য অর্জনের জন্য ১৯৬৯ সালের গণঅভুত্থান সংগঠিত হয়।

স্বায়ত্তশাসনের দাবি

স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ। স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনেক পূর্ব থেকেই করে আসছিল। সাহিত্য শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যদিও তারা উক্ত আন্দোলনে স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আবার তারা পশ্চিম পাকিস্তানি পাকিস্তানি দের শাসনের জাঁতাকলে পৃষ্ঠ হতে থাকে।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ
পাকিস্তানীদের ২৩ বছরের শাসনামল ছিল কলঙ্কময়। তাই স্বায়ত্তশাসনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাঙালি জাতিকে শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে এবং বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেগণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করে।

দমন নীতি গ্রহণ

আইয়ুব সরকারের দমন নীতি গ্রহণ ছিল 69 এর গণঅভ্যুত্থানের উল্লেখযোগ্য কারণ। সমগ্র পাকিস্তানের গণতন্ত্রমনা জনগণ যখন আইয়ুব শাসনের একনায়ক সুলভ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে, সরকার তখন নির্যাতন ও নিপীড়নের পন্থা অবলম্বন করে। ফলে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়েছিল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার পুনর্জাগরণ ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনে ৬৯ এর গণঅবস্থান এত বেশি প্রভাব ফেলে যার ফলে পরবর্তীতে তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে।

আজীবন ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র

গণঅভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকার ষড়যন্ত্র। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্ষমতায় থেকে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করলে তা স্বায়ত্তশাসনের আশায় ৬৬ সালে প্রণীত ছয় দফার রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং ৬৮-৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পথ সুপ্রপ্রশস্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে আনে স্বপ্নের স্বাধীনতা।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নিম্নে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলোঃ

আগরতলা মামলা প্রত্যাহার

1969 সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয়। 1968 সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে মোট 35 জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা অভিযোগে আইয়ুব-মোনায়েম চক্র আগরতলা মামলা দায়ের করে। কিন্তু বাংলার মুক্তি পাগল জনতা মামলা প্রত্যাহারের তাবিতে অনর ও অটল থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে ও মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান

গণঅবস্থনের তীব্রতা প্রশমনের জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান 1969 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়াল পিন্ডিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এক গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করে। এ বৈঠকে ছয় দফা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। ফলে গণ আন্দোলন আবারো তীব্র রোগ ধারণ করে এবং পাকিস্তানের প্রশাসন যন্ত্র অচল হয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গোলটেবিল বৈঠক বর্জন

রাওয়াল পিন্ডিতে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে গৃহীত তিনটি বিষয়ে আইয়ুব খান ও বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দ একমত পোষণ করেন। কিন্তু ছয় দফার ভিত্তিতে পূর্ণ স্বাস্থ্য শাসনের দাবি না মানায় বঙ্গবন্ধু-টেবিল বৈঠক বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

আইয়ুব সরকারের পতন

১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করে লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খান পদত্যাগে বাধ্য হন।

১৯৭০ সালের নির্বাচন

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধিকার অর্জনের চেতনায় জাগ্রত করে তোলে। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটতে থাকে। তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের গঠনের ক্ষেত্রে এই নির্বাচন ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৬৯ সালের আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তাছাড়া তিনি বাংলার জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। 1967 সালের 29 ফেব্রুয়ারি কোন সংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি

এ আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হয়। আর জাতীয়তাবোধ চেতনা থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা লাভ করে।

স্বাধীনতা অর্জন

পাকিস্তানের সামরিক জান্তা এ গণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার শত চেষ্টা করেও সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। এ আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

উপসংহার

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে পূর্ব বাংলা ব্যাপক লাভবান হয়। কেননা এই অবস্থানের কারণে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, 1969 সালের আন্দোলন বাংলা বা বাঙ্গালীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলে ১৯৬৯ সালের গণঅভুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের বেশ কিছু অজানা তথ্য ছিল যেগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

এতক্ষন ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এই ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটটি ফলো করতে থাকুন। কারণ আমরা এই ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত নতুন নতুন করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url