খেজুরের গুড়ের ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের অনেকেরই জানা নেই বা সঠিক ধারণা নেই। এজন্যই আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর শীতের মৌসুমে খেজুরের গুড় সবার কাছেই অনেক পছন্দের হয়ে ওঠে।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এজন্যই আপনারা আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
খেজুর গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে?
আমাদের অনেকেরই জানা নেই বা আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে খেজুরের গুড় খেলে এটি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন বাড়াতে পারে। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য যাদের এই সম্পর্কে সঠিক তথ্য বা পরামর্শ জানা নেই। সাধারণত খেজুরের গুড়ের মধ্যে রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম জাতীয় খনিজ উপাদান।
যাদের নিয়মিত গুড় খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে বা যারা নিয়মিত গুড় খেতে ভালোবাসেন তারা খেজুরের গুড়ের মধ্যে নানান ধরনের উপকারিতা পাবেন। যেহেতু খেজুরের গুড়ের মধ্যে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম এর উপাদান রয়েছে। সেহেতু খেজুরের গুড় আমাদের শরীরের ওজন কমাতে দারুন কাজ করে থাকে।
আপনাদের যাদের সমস্যা রয়েছে বা নিয়মিত ডায়েট করেন তাদের জন্য খেজুরের গুড় একটি উপকারী খাবার।ওজন কমানোর জন্য খেজুরের গুড় আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো গুড় কোনটি?
শীতকাল আসলেই গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ এ সময় বিভিন্ন রকমের পুরি পিঠা বানানো হয়। আর এজন্যই আমাদের শরীরকে ভালো রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর গুড় নির্বাচন করা অতীব জরুরী। কারণ অস্বাস্থ্যকর গুড় খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আর এজন্যই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর গুড় খেতে হবে।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো কোনটি এই সম্পর্কে?আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো গোলগুলোর মধ্যে নারকেলের গুড়, খেজুরের গুড়, আখের গুড় এই সকল গুড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। আর এ সকল গরু খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এই সবগুলো গুড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।
কিন্তু এ সকল বোর্ডের মধ্যে খেজুরের গুড় সবথেকে স্বাস্থ্যকর বা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তার কারণ হচ্ছে এতে গ্লাইসেমিকইনডেক্স এর মাত্রা কম থাকে। তাই খেজুরের গুড় অন্যান্য গুড়ের তুলনায় এর পুষ্টিগুণ বেশি। তাছাড়া আপনি যদি কোন ধরনের ফেলুতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এই গুড় খাওয়ার ফলে আপনি অনেকটা উপকার পাবেন।
খেজুরের গুড়ের ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের দেশের শীতের মৌসুম মানে খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেশি। কারণ এই সময় এই গুড়ের নিজস্ব গন্ধ ও সাধের জন্য সবার কাছেই এটি পছন্দের খাবার। আর এই শীতে পিঠা পায়েস তৈরিতে খেজুরের গুড় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়াও খেজুরের গুড়ের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেজুরের গুড়ের কিছু পরিমাণে অপকারিতা ও দেখা দিয়ে থাকে তবে সেটি খুবই অল্প পরিমাণে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
উপকারিতা
- খেজুরের গুড়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা খেলে এটি আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড় নারীদের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান এর চাহিদা মিটিয়ে থাকে এবং এটি নারীদের বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড়া আরেকটি অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে এটি আমাদের লিভার কে ভালোমতো কাজ করতে সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড় আমাদের ত্বকের ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করতেও সাহায্য করে থাকে।
- তাছাড়াও খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে এটি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে থাকে।
- খেজুরের গুড় আমাদের কোল্ড এলার্জি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
- খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ। যা আমাদের শরীরের হার ও বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- খেজুরের গুড় আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- শীতের মধ্যে শরীরকে গরম রাখতে বা সর্দি কাশি ও চোরের মত রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে খেজুরের গুড় একটি খুবই উপকারী খাবার।
- খেজুরের গুড় আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট, আয়রন এবং গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
অপকারিতা
সাধারণত খেজুরের গুড়ের গুণগত মানসহ অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে খেজুরের গুড় আসলে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে। আর এ বিষয়ে আপনাদের জানা অবশ্যই দরকার। খেজুরের গুড় অনেক আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি তো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে আপনারা সকলে অবগত আছেন যে যে কোন কিছুই বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা বা খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
- এমন অবস্থায় আপনারা যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে খেজুরের খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
- খেজুরের গুড়ের মধ্যে রয়েছে প্রতি ১০০ গ্রাম গুড়ের মধ্যে ৩৮৫ ক্যালোরি রয়েছে। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ চেষ্টায় আছেন তাদের জন্য এটি উপকারী নাও হতে পারে।
- অতিরিক্ত খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে ফেলতে পারে।
- খেজুরের গুড় যদি অসুস্থ কর পরিবেশে তৈরি হয়ে থাকে তাহলে সেই গুড় খাওয়ার ফলে আপনাদের শরীরে জীবাণু সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
- সদ্য তৈরীকৃত খেজুরের গুড় খেলে আপনাদের শরীরে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
- যাদের বাত বা প্রদাহ ভিত্তিক রোগ রয়েছে তারা অবশ্যই খেজুরের গুড় খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। কারণ এটি আপনার শরীরে সুক্রোজ ওমেগা থ্র' ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে প্রদাহের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- যাদের ডায়বেটিস রয়েছে তারা অবশ্যই গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। তা না হলে এটি আপনাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- গরমের সময় অতিরিক্ত খেজুরের গুড় খেলে এটি আপনার শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন নাত দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি।
খেজুরের গুড় দাম ২০২৪
জানা যায় আমাদের দেশে প্রতি শুক্রবার ও সম্বর করে ২০-৩০ ট্রাক খেজুরের গুড় আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়ে থাকে। আর শীতের তিন মাস এ হাটটি বেশ জমজমাট থাকে। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই হাটে এসে খেজুরের গুড় কিনে নিয়ে যায়। তবে সাধারণত খেজুরের গুড়ের দাম এর মানের ওপর নির্ভর করে এর দাম নির্ধারণ করা হয়।
আমাদের দেশে প্রতি কেজি খেজুরের গুড়ের দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজি করে বিক্রয় করা হয়। গত দুই থেকে তিন বছর আগেও খেজুরের গুড়ের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে সব কিছু দাম বাড়ার কারণে খেজুরের গুড়ের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খেজুরের গুড়ে কি ফ্যাট আছে?
চিনির তুলনায় খেজুরের গুড়ের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ অনেকটাই কম। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ের মধ্যে রয়েছে ১.৫গ্রাম প্রোটিন, ০.৩ গ্রাম ফ্যাট,৮৫.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং২.৫ গ্রাম আস। আর এছাড়াও খেজুরের গুড়ের মধ্যে রয়েছে জোর করে অনেক ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, কপার ও ক্লোরাইড পাওয়া যায়।
এজন্য যারা ওজন কমাতে চান তারা চাইলে বউ খেতে পারেন। কারণ এটি আমাদের শরীরে ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী একটি খাবার। আর এতে চিনির তুলনায় কম ক্যালরি রয়েছে। যার কারণে এটি আমাদের শরীরে হজম শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে। আর যেহেতু খেজুরের গুড়ের মধ্যে ফ্যাট এর পরিমাণ অনেকটাই কম এটি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলে পড়ার মাধ্যমে আপনারা খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেও বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়াও আজকের আমরা খেজুরের গুড় সহ আরো বিভিন্ন সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের আরো নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url