থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী কত বছর বাঁচে তা নিয়ে আলোচনা।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী কত বছর বাঁচে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে আজকের আর্টিকেলে। থ্যালাসেমিয়া একটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রছন্ন জিন ঘটিত বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কনার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। 
থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার
আজকেরে আর্টিকেলে আমরা থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণ সহ আরো বিভিন্ন সম্পর্কে আলোচনা করব। এজন্য আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করবেন।

থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণ

এই পর্বে আমরাে থ্যালাসেমিয়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জানব। যখন একটি শিশু পিতা মাতা বা উভয়ের কাছ থেকে একটি ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিন উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, তখন শরীর ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন গঠন করে। হিমোগ্লোবিন একটি আয়রন বাইন্ডিং প্রোটিন যা আলফা এবং বিটা চেইনের সমন্বয়ে গঠিত। প্রোটিন গঠন অক্সিজেন এবং বহন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আর শরীরে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ যত বেশি থ্যালাসেমিয়ার তীব্রতা ততটাই বেশি হবে। আর থ্যালাসেমিয়ার রোগের কারণ হল অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন বহন করতে ব্যর্থ হয় এর ফলে রক্তস্বল্পতা এবং এর সাথে সম্পর্কিত উপসর্গ শরীরে দেখা দেয়। যার ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্ত কণিকার বর্ধিত গঠনের সাথে এই পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

আর এই অতিরিক্ত উৎপাদন ড্রাইভের ফলে আরও উপসর্গ এবং জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে। এছাড়াও থ্যালাসেমিয়ার আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে। যা শিশুর কয়েক মাস হলেই সাধারণত এই লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে:
  • ফ্যাকাসে চামড়া
  • অস্বাভাবিক চঞ্চলতা
  • অপর্যাপ্ত বা ধীরগতির বৃদ্ধি
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • সংক্রমণ প্রবণ
  • হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
  • প্রতিনিয়ত জ্বর আসা
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী কত বছর বাঁচে

থ্যালাসেমিয়া একটি তীব্র রক্তের রোগ, যা সাধারণত হিমোগ্লোবিনের অভাব বা অস্বাভাবিকতার কারণে রক্তের পরিবহন কমিয়ে দেয়। এই রোগটি বংশগত এবং সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর। থ্যালাসেমিয়া মেজর আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত রক্তদান ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, যাতে শরীরের রক্তের অভাব পূরণ করা যায়।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী কত বছর বাঁচে
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর জীবনকালের পূর্বাভাস নির্ভর করে রবিটির মাত্রা ও চিকিৎসার অবস্থা অনুসারে। থ্যালাসেমিয়া মেজর আক্রান্ত রোগীদের জন্য যদি নিয়মিত রক্তদান, আয়রন চেক এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করা হয় তবে তাদের তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ৩০ বছরের মধ্যে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে।

তবে আধুনিক চিকিৎসা, বিশেষত রক্তদান এবং আয়রন জমা হওয়ার রোধের জন্য বিভিন্ন থেরাপি জীবন কালকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বর্তমানে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাড়ের মজ্জা প্রতিস্থাপন একটি কার্যকরী চিকিৎসা হতে পারে, যা জীবনের জন্য নিরাময় প্রদান করতে সক্ষম হবে। তবে এই চিকিৎসা সব রোগের জন্য সম্ভব নয় এবং এতে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে।

সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত রক্তদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা 40 থেকে 50 বছর বা তার চেয়ে বেশি বাঁচতে পারে। তাই আমরা বলতে পারি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর জীবনকাল অনেকাংশে নির্ভর করে চিকিৎসা, রোগের প্রকার এবং স্বাস্থ্যের তদারকির উপর।

থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার

থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক রক্তের রোগ, যেখানে শরীর রক্তের প্রয়োজনীয় হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে অক্ষম হয়। হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্তের সেলগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। যার ফলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। এ রোগের স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছে ‘ব্যোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন’ ও জীন থ্যারাপি। তবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। 

অথচ একটু সতর্কতা অবলম্বন করা হলেই এই মর্মান্তিক পরিণতি থেকে এড়ানো যাবে। থ্যালাসেমিয়া দুটি প্রধান ধরনের হয়ে থাকে সেগুলো হলো থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর। থ্যালাসেমিয়া মেজর গুরুতর হয় এবং এর জন্য নিয়মিত রক্তদান এবং বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
  • প্রথমত দেশের প্রতি টিম নাগরিককেই এই রোগের সম্বন্ধে সচেতন করে তুলতে হবে।
  • যদি পরিবারের কোনো সদস্যদের থ্যালাসেমিয়া রোগের ইতিহাস থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভধারণ করার আগে অবশ্যই তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
  • থ্যালাসেমিয়া রোগ থেকে বাঁচতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এ রোগের বাহকদের সনাক্ত করা। আর দুজন বাহক যদি একে অন্যকে বিয়ে না করে তাহলে কোন শিশুরই থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সম্ভব নয়।
  • থ্যালাসেমিয়া মেজর এর ক্ষেত্রে একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে হাড়ের মজা প্রতিস্থাপন। যায় একটি দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া হলেও এটি রোগের জীবন বাঁচাতে সহায়ক।

থ্যালাসেমিয়া কত বছর বয়সে হয়?

থ্যালাসেমিয়া একটি রক্ত বিষয়ক বংশগত রোগ, যা সাধারণত জন্মের পর থেকেই দেখা দেয় এবং জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এ রোগের মূল কারণ হলো রক্তে সে তখনই কাবা হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিকতা, সঠিকভাবে অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে না। থ্যালাসেমিয়া দুটি প্রধান ধরনের হতে পারে সেগুলো হলো- থ্যালাসেমিয়া আলফা এবং থ্যালাসেমিয়া বিটা এবং এটি সাধারণত বাবা-মায়ের মধ্যে কোন এক বংশগতির মাধ্যমে শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। 

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণগুলো সাধারণত জন্মের পরেই প্রকাশ পায়। এটি শিশুর শরীরে রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি করে যার ফলে শিশুরা ক্লান্তি, বারবার ইনফেকশন হওয়া, এবং পেটে ঘাড়ে ও অস্থি অঞ্চলে ব্যথা অনুভব হওয়া। অনেক ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়ার শিশুরা রক্তের ঘাটতি পূরণের জন্য নিয়মিত রক্ত ট্রান্সফিউশন করতে পারে। এই রোগের ব্যাপারে চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যত তাড়াতাড়ি এটি চিহ্নিত করা যায় তত দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়।

থ্যালাসেমিয়া কোন নির্দিষ্ট বয়সে শুরু হয় না তবে এটি সাধারণত জন্মের পর প্রথম দুই বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। তবে রোগটির মারাত্মকতা ও লক্ষণ গুলি বয়সের সাথে আরো প্রকট হতে পারে। তাই শিশুর যত্ন ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ

শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে জানব। থ্যালাসেমিয়া একটি রক্তের গম্ভীর রোগ, যা সাধারণত জন্মগত এবং শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই রোগে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারেনা, যার ফলে রক্তস্বল্পতা এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। 
শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ
আর শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ গুলি সাধারণত খুব তাড়াতাড়ি দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে জন্মের পর প্রথম কিছু মাসের মধ্যে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে।
  • রক্তস্বল্পতা বা এমিনিয়া
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা
  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি
  • অস্থির হৃদস্পন্দন ও শ্বাসকষ্ট
  • হাড়ের বিকৃতি
  • খিদে নাও হওয়া
  • জন্ডিস
  • গাঢ় প্রস্রব
  • তলপেট ফুলে যাওয়া
  • ফ্যাকাসে বা হলুদ ত্বক
সাধারণত শিশুদের থ্যালাসেমিয়া রোগ দেখা দিলে উপরিউক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়। আর থ্যালাসেমিয়া প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে জীবনব্যাপী চিকিৎসা এবং রক্তের প্রয়োজনে কিছু শিশুদের নিয়মিত রক্ত দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য বা শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ ধরে আমাদের আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী কত বছর বাঁচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তাছাড়াও এখানে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিরোধ লক্ষণ ও কারণ সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এ ধরনের আরো নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকে। আপনাদের কোন মতামত থাকলে আপনারা কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url