খেজুরের রসের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

খেজুরের রসের অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। এজন্য আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা খেজুরের রসের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর শীতকালে খেজুরের রসের চাহিদা অনেকটাই বেশি থাকে। এজন্য আমাদের সবারই জেনে থাকা উচিত খেজুরের রসের অপকারিতা সম্পর্কে।
খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা খেজুরের রসের অপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এজন্য আপনারা আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করবেন। তা না হলে আপনাদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য না জানা থেকে যেতে পারে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।

খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম

শীতকালের হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে আমাদের সবার পছন্দের খাবার হচ্ছে খেজুরের রস। অনেকেই আবার এই রসকে বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি, পায়েস এবং গুড় তৈরি করে খেয়ে থাকে। খেজুরের রস একটি পুষ্টিকর পানীয় যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রকারে আসে। খেজুরের রসের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি, খনিজ, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে যা আমাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে থাকে। তবে খেজুরের রস খাওয়ার কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি আমাদের আরো উপকারে আসতে পারে। নিচে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • খেজুরের রস অত্যন্ত মিষ্টি জাতীয় পানীয় খাবার। তাই এটিকে নিয়মিত খাওয়ার সময় অবশ্যই এর পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনারা প্রতিদিন এক কাপ বা ২০০ থেকে ২৫০ মিলি খেজুরের রস খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • খেজুরের রস খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে আমাদের শরীরের রক্তের শর্করার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। এজন্য সবচেয়ে ভালো হবে এটি কে খাবারের পর পান করা।
  • খেজুরের রসে প্রাকৃতিক চীনের পরিমাণ বেশি রয়েছে, তাই একসাথে অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের উচিত হবে না। কারণ এটি শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ করতে পারে এবং আমাদের ওজন বৃদ্ধি করতেও পারে।
  • বাজারে বিক্রি হওয়া অনেক খেজুরের রসের কৃত্রিম মিষ্টি এবং সংরক্ষণকারী উপাদান থাকতে পারে। তাই এই সব খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত এবং বিশুদ্ধ খেজুরের রস খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর হবে।

খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

খেজুরের রস একটি পুষ্টিকর পানীয় খাবার যা বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও পুষ্টিগুণায় পরিপূর্ণ। আমাদের অনেকেরই খেজুরের রসের পুষ্টি গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা নেই। আপনারা যদি খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারেন তাহলে আপনারা প্রত্যেক শীতে এটিকে নিয়মিত খাওয়া শুরু করে দিবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া জাক।
  • খেজুরের রসের মধ্যে শর্করা ও গ্লুকোজ রয়েছে। যার ফলে এক গ্লাস খেজুরের রস পান করলে এটি আমাদের শরীরে মধ্যে এনার্জি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাছাড়াও এই রসের মধ্যে গ্লুকোজ ও সুখ টোজ এর উপস্থিত থাকায় এটি আমাদের রক্তে মিশে শক্তির অভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • খেজুরের রসের মধ্যে লৌহ ও আয়রনের উপস্থিত থাকায় এটি আমাদের রক্তের স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
  • খেজুরের রসের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম এর উপাদান। যার ফলে খেজুরের রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের পেশীকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • খেজুরের রস আমাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করে থাকে এবং এটি আমাদের শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করতেও সাহায্য করে।
  • শীতে নিয়মিত খেজুরের রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের ত্বককে সজীব এবং মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
  • খেজুরের রসের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের কোষের বিকাশ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • খেজুরের রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতেও বেশ উপকারী।
  • খেজুরের রসের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস এর উপাদান যা আমাদের শরীরের হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • খেজুরের রসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যার ফলে এটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে সাহায্য করে।

খেজুরের রসের অপকারিতা

খেজুরের রসের অপকারিতা
খেজুরের রস আমাদের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য পরিচিত হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি অপকারিতা দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের অনেকেরই খেজুরের রসের অপকারিতা সম্পর্কে জানা নেই। এজন্য আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা খেজুরের রসের অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে খেজুরের রসে খুবই অল্প পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে। নিজে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
  • যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তারা খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তা না হলে এটি আপনাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • খেজুরের রসের মধ্যে পটাশিয়াম এর উপস্থিত রয়েছে। এজন্য যারা কিডনি রোগী রয়েছে তারা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকবেন তা না হলে এটি আপনাদের কিডনির সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা। তাই অতিরিক্ত খেজুরের রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত খেজুরের রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের পেটের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বা ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • উচ্চ পরিমাণে খেজুরের রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের হৃদ যন্ত্রে চাপ বাড়াতে পারে। বিশেষ করে এটি আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুরের রস খবর ফলে এটি আমাদের লিভারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

খেজুরের রস কখন খাবেন?

আমরা সকলেই ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি যে, খেজুরের রস একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। আর এটি সাধারণ তো শীতের মৌসুমে পাওয়া যায় যখন খেজুর গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। তবে আমাদের অনেকেরই মধ্যে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে যে খেজুরের রস কখন খাওয়া ভালো হবে। খেজুরের রস খাওয়ার সবচেয়েই আদর্শ সময়ে হল ভোরবেলা। 

কারণ সারারাত ধরে রস জমতে থাকে এবং সকল পর্যন্ত এই রস টাটকা থাকে। আর এর স্বাদ এবং গন্ধটাও সবচেয়ে ভালো থাকে সকালবেলায়। কিন্তু বেলা বাড়তে থাকলে খেজুরের রসের স্বাদ এবং গন্ধ পরিবর্তন আসতে পারে। এর মধ্যে অম্লতার মাত্রা বাড়ে কারণ দিনের আলোয় ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া দ্রুত হতে থাকে। তাই খেজুরের রস সংগ্রহের তিন ঘন্টার মধ্যেই বা সকালবেলায় করা রোধ ওঠার আগেই এটিকে খেয়ে ফেলা উত্তম হবে।

খালি পেটে খেজুরের রস খেলে কি হয়?

খালি পেটে খেজুরের রস খাওয়া শরীরের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই উপকারী হতে পারে। তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সতর্কতা রয়েছে যা আমাদের জেনে রাখা উচিত। খেজুরের রসে মূলত প্রাকৃতিক চিনি, ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় খাবার। যার ফলে এদিকে খালি পেটে খাওয়ার ফলে এটি আমাদের পেটের স্বাস্থ্য, হজম এবং শক্তি যোগান দিয়ে সাহায্য করে থাকে। 

আবার অনেক সময় খালি পেটে খেজুর খাওয়ার ফলে এটি কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য খেজুরের রস খালি পেটে খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে এর পরিমাণ মেপে খাওয়া ও সতর্কভাবে খাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে।

কাঁচা খেজুরের রস খেলে কি হয়?

শীতকলে অনেকেই খেজুরের রস খেতে ভালোবাসে। গ্রামগঞ্জে এ সময় অনেকেই গাছ থেকে নামিয়ে কাচা রস পান করতে দেখা যায়। আবার অনেক সময় এটিকে চুলায় ফুটিয়ে পায়েস বা ক্ষীর বানিয়েও খেয়ে থাকে। খেজুরের রস থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের গুঁড়ো আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। তবে এই গাছ থেকে নামানো কাঁচা খেজুরের রস পান করলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, খিচুনি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। 
কাঁচা খেজুরের রস খেলে কি হয়
অনেক সময় দেখা যায় অনেক রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। আর এর কারণ হচ্ছে ‘নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিস’ আর এই ভাইরাসটি মূলত বাদুড়ের কাছ থেকে খেজুরের রসে ছড়ায়। কারণ আমাদের দেশে খেজুরের রস কাছ থেকে সরাসরি কলসির মাধ্যমে সংগৃহীত হয়ে থাকে। আর কলসিটি সারারাত খেজুর গাছে ঝুলানো থাকে। 

এমন অবস্থায় বাদুর রাতে খেজুরের রস খেতে আসে তখন তার মধ্যে তার মুখের লালা অথবা বাদুড়ের মলমূত্রের মাধ্যমে এই নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়ে যায়। তবে খেজুরের রস কে ভালোমতো ফুটিয়ে খেলে এই নিপা ভাইরাসটি মরে যায়। এজন্যই আমাদের কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া উচিত না। খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এটিকে ভালোমতো ফুটিয়ে নিয়ে খাওয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা খেজুরের রস খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তাছাড়াও এখানে খেজুরের রস নিয়ে আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।

তাই আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এ ধরনের আরো নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা টিকে লিখে পাবলিশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url