কিসমিস খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
ড্রাই ফ্রুট এর মধ্যে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত এবং অন্যতম হচ্ছে কিসমিস। আমরা এটিকে সরাসরি ও বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহার করে খেয়ে থাকি। বিভিন্ন খাবারের সাথে কিশমিশ মিশিয়ে দিলে এটি খাবারের স্বাদকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। কিসমিস আমাদের অনেক পরিচিত হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। পাশাপাশি আপনারা আরও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে। এজন্য আজকের এই আর্টিকেলটি আপনারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করবেন।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
আমাদের সকলেরই জানা রয়েছে যে, কিসমিস আমাদের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক কলেজ টেরোল দূর করে। এর মধ্যে রয়েছে নানান ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস। তবে আমাদের অনেকেরই কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানা নেই। কিশমিশ খাওয়ার নিয়মে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যা আমাদের শরীরের উপকারিতার জন্য সহায়ক।
কিসমিস বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ এবং নিয়মিত খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক কিসমিস খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে।
- কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার পরিমাণ। অধিক পরিমাণে কিসমিস খাওয়া আমাদের শরীরে অতিরিক্ত শর্করা এবং ক্যালরি যোগ করতে পারে, যার ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই সাধারণত প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টি কিসমিস খাওয়া উপযুক্ত হবে।
- আপনারা চাইলে কিসমিস খাওয়ার আগে এটি কে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে খাওয়া সবচেয়ে ভালো হবে। এতে কিসমিসের সঞ্চিত পানি শরীরের দ্রুত শোষিত হয় এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।
- আপনি যখনই বাজার থেকে কিসমিস কিনে আনবেন তখনই সঙ্গে সঙ্গে সেটি খাবেন না। কয়েকবার ভালো করে ধুয়ে তারপরে কিশমিস খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- তাছাড়া অবশ্যই আপনারা যখনই কিসমিস খাবেন বা রান্নায় ব্যবহার করবেন তার পূর্বে অবশ্যই ভালো হবে সেটিকে ধুয়ে তারপর খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- কিশমিশ অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। যেমন- দুধের সঙ্গে কিসমিস মিশিয়ে খাওয়া, স্বাভাবিক কিসমিস যোগ করা বা মিষ্টান্ন খাবারের সাথে কিসমিস ব্যবহার করা।
- কিসমিসের মধ্যে প্রাকৃতিক শ্রেণীর পরিমাণ বেশি হলেও এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে না তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটিকে পরিমাণে কম খাওয়া উচিত হবে।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাধারণত কিসমিসের কোন গাছ নেই। তবে এটি একটি আলাদা ফল থেকে পাওয়া যায় আর সেটি হল আঙ্গুর ফল যাকে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। আঙ্গুর ফলকে রোদের মধ্যে শুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে কিসমিস তৈরি করা হয়। কিসমিস একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। এটি সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি শরীরের জন্য অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা ও প্রদান করে থাকে।
তবে কিশমিশের অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই পর্বে আপনারা কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। নিচে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- প্রতিদিন কিশমিশ খাওয়ার ফলে এটি আমাদের পেট ভালো রাখে। কারণ এতে রয়েছে ফাইবার যা পানির উপস্থিতিতে ফুলে উঠতে শুরু করে আর এগুলো পেটে রেচক প্রভাব দেয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- কিশমিশার মধ্যে রয়েছে আন্টি অক্সিজেন যা আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে এবং শরীরের কোষগুলোকে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
- কিশমিশের মধ্যে রয়েছে আয়রন এবং ভিটামিন বি ১২ যা আমাদের রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়ায় এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা আমাদের হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।
- কিসমিসের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা আমাদের দাঁতের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি আমাদের মুখের ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে।
- কিসুসের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও বোরন, যা আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- কিসমিসের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের ক্ষতি হতে রক্ষা করে এবং এটি আমাদের ত্বকে করে নরম ও উজ্জ্বল।
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
- কিসমিসের মধ্যে রয়েছে চিনি যা অতিরিক্ত খেলে এটি আমাদের শরীরে শর্করা বাড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।
- কিসমিসের মধ্যে ফাইবার বেশি থাকায় এটি অতিরিক্ত খেলে এটি আমাদের পেটে অস্বস্তিকর বা পেট ফোলার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- কিছু মানুষ কিসমিষে থাকা সালফাইটের প্রতি সংবেদনশীল। যার ফলে তাদের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- কিসমিসের মধ্যে থাকা অক্সালেট আমাদের কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। তাই যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা এটিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
- তাছাড়াও অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের প্রতি বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
কিসমিস একটি পুষ্টিকর ফল, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত আমাদের প্রতিদিন 20 থেকে 30 গ্রাম কিসমিস খাওয়া যথেষ্ট হবে। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, খনিজ উপাদান যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন থাকে।
কিসমিস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের হজম শক্তি বাড়ায়, ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ ভালো রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তবে কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালরি থাকায় এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আমাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন বাড়াতে পারে। কিসমিস খাওয়ার জন্য সকালে বা দুপুরে খাবারের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।
কিশমিশ খেলে এটি আমাদের শরীরে ঠিকমতো পুষ্টি উপাদান পৌঁছায়। তাই স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য কিসমিস খাওয়া যেতে পারে। তাই আপনারা চাইলে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয়
আমরা সকলেই জানি কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। তাছাড়াও আমরা কিশমিশ কে আরো বিভিন্ন রান্নায় মিশালে এটি খাবারের স্বাদকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে রান্নায় দিয়ে অথবা শুধু খাওয়ার বদলে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে তার চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে আমাদের এই সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই যে, কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে।
তাহলে আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে এটি আমাদের কি ধরনের উপকারে আসে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
- ভেজানো কিসমিসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা খাওয়ার ফলে এটি আমাদের হজম শক্তি ঠিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে আনে।
- কিসমিস আয়রনের খুব ভালো একটি উৎস, যা ভিজিয়ে খেলে তার মধ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে আইরন পাওয়া যায়।
- কিসমিস ভেজিয়ে খাওয়ার ফলে এটি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি আমাদের হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- ভেজানো কিসমিস খেলে এটি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
- কিসমিস ভেজিয়ে খাওয়া আমাদের কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ এটি কিডনিতে থাকা টক্সিন বের করে শরীরে বিশুদ্ধতা বজায় রাখে
- কিশমিশ ভেজিয়ে খাওয়ার ফলে এটি আমাদের বয়সজনিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়
কিশমিস বা শুকনো আঙ্গুর একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে কিশমিশ খেলে কি ফর্সা হওয়া যায়? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা এই বিষয়ে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আসলে কিসমিস ত্বকের রং পরিবর্তন করতে সরাসরি কার্যকর নয়, কিন্তু এটি ত্বককে স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল করতে পারে। কিশমিশে উপস্থিত নানা পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদান আমাদের ত্বকের সজগতা ও স্বাস্থ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিসমিসের মধ্যে রয়েছে আয়রন যা আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা প্রদান করতে পারে।
তবে কিসমিস খাওয়ার ফলে ত্বক হঠাৎ করেই ফর্সা হওয়ার আশা না করায় উত্তম। কারণ এটি আপনার ত্বক স্বাস্থ্যবান, গ্লোয়িং এবং তরুণ রক্তে সাহায্য করবে, কিন্তু ত্বকের প্রকৃত রঙের পরিবর্তন করতে এটি একমাত্র উপাদান নয়। ত্বক ফর্সা বা উজ্জ্বল করার জন্য সঠিক পুষ্টি জল প্রাকৃতিক ত্বক পরিচর্যা এবং সঠিক জীবন যাপন করার প্রয়োজন রয়েছে।
লেখক এর মন্তব্য বা শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেও বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়াও আপনারা এখানে কিশমিশ খেলে কি ফর্সা হয় সেই সম্পর্কেও সঠিক একটি ধারণা পেয়েছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
আর এ ধরনের আরও নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকি। আর আপনাদের যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url