ইলিশ মাছের ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ইলিশ মাছ আমাদের বাংলাদেশ সহ পুরো পৃথিবীতেই একটি জনপ্রিয় মাছ। এই মাছটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিতে ভরপুর। যারা মাছ খেতে পছন্দ করে না তারাও এই ইলিশ মাছ খেতে ভালোবাসে। এজন্যই আজকে আমরা ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
এর পাশাপাশি আমরা ইলিশ মাছ নিয়ে আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এজন্য আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন। তা না হলে আপনাদের অনেক কিছুই অজানা থেকে যাবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
ইলিশ মাছের রেসিপি
ইলিশ মাছের বিভিন্ন রেসিপি সম্পর্কে আমরা এখন জানব। ইলিশ মাছ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করা যায়। আর ইলিশ মাছ দিয়ে রান্না করা রেসিপির স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেক সুন্দর হয়ে থাকে। নিচে ইলিশ মাছের কয়েকটি রেসিপি সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ
লেবু পাতায় ইলিশ ভুনা
উপকরণ:
- ইলিশ মাছ, মাথা, ডিমসহ ছোট করে কাটা দুই কাপ।
- লেবু পাতা 5 থেকে 6 টি।
- পেঁয়াজ কুচি এক কাপ।
- কাঁচামরিচ ৫ থেকে ৬ টি।
- হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ।
- মরিচ গুঁড়া এক চা চামচ।
- জিরা গুঁড়া আধা চা চামচ।
- তেল আধা কাপ।
- লবণ স্বাদমতো।
- লেবুর রস ১ টেবিল চামচ।
- চিনি এক চা চামচ।
- টমেটো সস 2 টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী:
- প্রথমে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভাজতে হবে।
- এরপরে পেঁয়াজ নরম হলে সমস্ত মসলা কষিয়ে টমেটো সস দিয়ে মাছ দিয়ে কিছুক্ষণ ভুনা করে এক কাপ পানি দিতে হবে।
- এরপর ঝোল কমে এলে চিনি, লেবুর রস, কাঁচামরিচ, লেবু পাতা পর্যায়ক্রমে দিয়ে নামাতে হবে।
ইলিশ পোলাও
উপকরণ:
- বড় একটি ইলিশ মাছ
- পোলাওয়ের চাল 2 কাপ
- আদা বাটা 2 চা চামচ
- পেয়াজ বাটা 2 টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ কুচি
- বেরেস্তা
- কাঁচামরিচ 10 থেকে 12 টি
- টক দই আধা কাপ
- তেল আধা কাপ
- দারুচিনি দুই টুকরা
- এলাচ চারটি
- তেজপাতা একটি
- লবণ পরিমাণ মতো
- চিনি এক চা চামচ
- লেবুর রস 2 টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী: প্রথমে মাসটিকে কেটে বড় বড় টুকরা করে ভালোমতো ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। সামান্য আদা পেঁয়াজ বাটা, টক দই, লবণ মাখিয়ে 30 মিনিট রাখুন। এরপর পোলাও রান্নার হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে বাকি বাটা মসলা ভুনা করে মাছ দিয়ে অল্প আচে ১৫ মিনিট রান্না করতে হবে। মাঝখানে একবার মাছ উল্টিয়ে দিন।
তেলের ওপর এলে হাড়ি থেকে মাছ উঠিয়ে চার কাপ গরম পানি ও গরম মসলা দিয়ে ফুটে উঠলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল ও লবণ দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর লেবুর রস দিয়ে চিনি দিয়ে কয়েকবার নেরে দিন। পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে হাঁড়ি থেকে কিছু পোলাও তুলে মাছ, মরিচ, কিছু বেরেস্তা দিয়ে সাজিয়ে বাকি পোলাও দিয়ে ঢেকে দিন। অবশেষে কিছু বেরেস্তা ছিটিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে 10 থেকে 15 মিনিট দমে রেখে পরিবেশ করুন।
ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতা
ইলিশ মাছ খেতে ভালোবাসে না এমন বাঙালি আমাদের দেশে খুবই কম রয়েছে। ইলিশ মাছ আমাদের প্রায় সকলেরই পছন্দের একটি খাবার। আর এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ উপাদান। তবে আপনারা হয়তো অনেকেই ইলিশ মাছের ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে ইলিশ মাছের ডিম পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং এর বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। নিচে ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ
- ইলিশ মাছের ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যার হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
- ইলিশ মাছের ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস। এজন্য এটি শরীরের কোষ পুনর্গঠন এবং মাংসপেশীর বৃদ্ধি ও মেরামতে সাহায্য করে থাকে।
- তাছাড়াও এর মধ্যে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড মানসিক অবসাদ, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন কাটাতেও সাহায্য করে থাকে।
- এছাড়াও ইলিশ মাছের ডিমের রয়েছে ভিটামিন এ, ইপিএ এবং ডিএইচ যা শিশুদের চোখ ভালো রাখার পাশাপাশি বড়দের জন্য খুবই ভালো।
- ইলিশ মাছের ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের রক্ত পরিষ্কার করে রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- ইলিশ মাছের ডিমে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ কমাতেও সহায়ক।
ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এখন জানব। ইলিশ মাছটি আমাদের সকলেরই পছন্দের একটি খবর। সমুদ্রে ও নদীতে থাকা এই মাছটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি মাছ। আর এজন্যই এই মাছটি আমাদের সকলের কাছেই অতি প্রিয় একটি মাছ।
এজন্য আমরা আজকের এই আর্টিকেলে ইলিশ মাছের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করব। কারণ ইলিশ মাছ যেমন স্বাস্থ্যকরী উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। যে সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জেনে থাকা অত্যন্ত জরুরী।
ইলিশ মাছের উপকারিতা
- ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে এটি স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এর মত প্রাণঘাতী সমস্যার যোগ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- ইলিশের মধ্যে ওমেগা 3 ফ্যাটিয়াসিড অস্ট্রিওয়েথ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নিরাময়ে বেশ ভালো কাজ করে থাকে।
- ইলিশ মাছের মধ্যে রয়েছে সমৃদ্ধ প্রোটিন যা আমাদের শরীরে কোষের যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে কোষের সার্বিক কার্যকারিতা বাড়ায়।
- ইলিশ মাছে থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি শিশুদের রাতকানা ও রিকেট রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
- ইলিশ মাছের মধ্যে আয়োডিন, সোডিয়াম, ড্রিঙ্ক ও পটাশিয়াম এর মত প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।
- ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা প্রোটিন আমাদের ত্বকে কোলাজেন তৈরি করতে সহায়তা করে, যার ফলে এটি আমাদের ত্বককে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
ইলিশ মাছের অপকারিতা
- ইলিশ মাছের কারনে কারো কারো এলার্জির প্রবলেম দেখা দিতে পারে। তাই যাদের অ্যালার্জির সম্ভাবনা রয়েছে তারা ইলিশ মাছ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
- যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা ইলিশ মাছ খেলে কিডনির সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
- ইলিশ মাছের প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আমাদের শরীরে ওজন বাড়াতে পারে।
- ইলিশ মাছ একটি জলজ প্রাণী। তাই এর মধ্যে ক্ষতিকারক জীবাণু থাকতে পারে। এজন্য রান্নার পূর্বে ইলিশ মাছ ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া উচিত।
ইলিশ মাছ খেলে কি প্রেসার বাড়ে
ইলিশ মাছ খেলে কি প্রেসার বাড়ে এ সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। এখন আপনারা আপনাদের মাঝে এই বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। ইলিশ মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী হলেও রক্তচাপের উপর এর প্রভাব নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। ইলিশ মাছ ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিডের সমৃদ্ধ যা আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে থাকে।
তবে ইলিশ মাছ রান্নার পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতিরিক্ত লবণ বা ভাজা ইলিশ খেলে এটি রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে যদি কেউ উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়ে থাকে তাহলে। ইলিশ মাছ খাওয়ার সময় পরিণত লবণ এবং স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি রক্তচাপের জন্য ক্ষতিকারক নয় বরং এটি আমাদের জন্য উপকারী হতে পারে।
কিডনি রোগীরা কি ইলিশ মাছ খেতে পারবে
কিডনি রোগীরা কি ইলিশ মাছ খেতে পারবে? এই বিষয়টি আমাদের অনেকেরই মাথায় ঘুরপাক খায়। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা ডায়েট করি বা নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল। আর সেখান থেকেই এই প্রশ্নটি এসে থাকে। এজন্য আমরা আজকের এই আর্টিকেলে কিডনি রোগীরা ইলিশ মাছ খেতে পারবে কিনা সেই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব।
সাধারণভাবেই কিডনি রোগী ইলিশ মাছ খেতে পারবেন কিনা সেটি নির্ভর করে তাদের কিডনির সমস্যার ধরন এবং তার অবস্থান অনুযায়ী। কারণ একজন কিডনি রোগের ডায়েটে প্রোটিন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আর ইলিশ মাছ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং এতে ফসফরাসের পরিমাণও বেশি রয়েছে।
এজন্য যদি কোন কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসে থাকেন বা তাদের কিডনির কার্যক্ষমতা খুব কম থাকে। সেক্ষেত্রে ফসফরাস ও প্রোটিনের পরিমাণ সীমিত রাখতে হয়। আর এক্ষেত্রে আপনাদের ইলিশ মাছ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর যদি আপনাদের ফসফরাস এবং প্রোটিন লেভেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে ইলিশ মাছ খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলা উচিত।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ইলিশ মাছ নিয়ে আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। সে সকল বিষয় যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
এতক্ষণ ধরে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আর এ ধরনের আরো নিত্যনতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন এবং আমাদের সাপোর্ট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url