তুলসী পাতার ২০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা তুলসী পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাছাড়াও আজকে আপনারা তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ছাড়াও আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এজন্য আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়
তুলসী পাতার রস চিবিয়ে খেলে কি হয়? এখন আমরা এই সম্পর্কে জানব। আমরা সকলেই জানি তুলসী পাতা আমাদের জন্য কতটা উপকারী। এর বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক প্রভাব আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। তবে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে বৈজ্ঞানিকেরা বলেন এর মধ্যে রয়েছে পারদ, যা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে এটি দাঁতের মধ্যে ফেলতে পারে।
তুলসী পাতা অ্যাসিডিক প্রকৃতির হওয়ায় এটি মুখের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এটিকে চিবিয়ে খাওয়ার ফলে এটি দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ক্ষারী পদার্থ। তবে আপনাদের যদি কাশি ও সর্দি থেকে থাকে তাহলে আপনারা তাৎক্ষণিক এই সমস্যা ও সময়ের জন্য তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্যই যথার্থ হবে।
তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা
আপনারা সকলে তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন, তুলসী পাতার চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা তুলসী পাতা চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যেটি জানার পরে আপনারা প্রতিদিন তুলসী পাতার চা খাওয়া শুরু করে দেবেন। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
- শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে: তুলসী পাতার চা খেলে এটি আমাদের শ্বাসকষ্টে সমস্যা দূর করে থাকে। পাশাপাশি এটি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং সাধারণ সর্দি কাশি থেকেও স্বস্তি দিতে সাহায্য করে।
- মানসিক চাপ কমায়: গবেষণা করে দেখা গেছে যে, তুলসী পাতার চা শরীরের কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমায়, যা আমাদের মানসিক চাপের পাশাপাশি উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
- দাঁত ও মৌখিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে: তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা নিয়মিত চায়ের সাথে খাওয়ার ফলে এটি আমাদের মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
- হজমশক্তি বাড়ায়: তুলসী পাতার চা পান করলে এটি আমাদের হজমের এনজাইমের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের অন্তরের স্বাস্থ্য উন্নতি হয়। তাই নিয়মিত তুলসি পাতার চা পান করলে এটি আমাদের গ্যাস ও বধ হজমের মতো সমস্যা দূর করে।
- শরীরকে ডিটক্সিফাই করে: তুলসী পাতার চা পান করলে এটি আমাদের রক্ত বিশুদ্ধ করে এবং তাকে পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এ পর্বে জানব। তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই প্রায় জানা রয়েছে। তবে তুলসী পাতা খেলে এটি আমাদের কি কি উপকারে আসে বা কি ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার বেশ পুরনো একটি ঐতিহ্য রয়েছে।
এটি বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক ঔষধি গুন রয়েছে যেটি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এনে দেয়। তবে এর কিছু উপকারিতাও বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিচে তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
তুলসী পাতার উপকারিতা
- সর্দি কাশি কমিয়ে দেয়: আমাদের ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি কাশি হলে এই পাতাটি খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে ঔষধ হিসেবে কাজ করে। যার ফলে এটি সর্দি ও কাশি সারাতে দ্রুত কাজ করে।
- গলা ব্যথা দূর করে: যাদের গলা ব্যথার সমস্যা রয়েছে বা গলা ব্যথায় ভুগছেন। তাদের এই সমস্যাটি দূর করতে আপনারা তুলসী পাতা খেতে পারেন। কয়েকটি তুলসী পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা আমাদের শরীরে টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। তাছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন। এ সকল উপাদান থাকার ফলে এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই পাতাটি খাওয়ার ফলে এটি এজমা, ফুসফুসের সমস্যা ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি মোকাবেলায় কাজ করে এই পাতা।
- ডায়াবেটিস দূর করে: তুলসী পাতার খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনে কাজ করে। যার ফলে এটি নিয়মিত সেবন করলে এটি আমাদের রক্তে সুপারের মাত্রা কমিয়ে আনে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
- বয়সের ছাপ দূর করে: তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে, যা আমাদের বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
- হার্ট সুস্থ রাখে: তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে এটি আমাদের রক্তে জমাট বাঁধার সমস্যা দূর করে। যার ফলে এটি আমাদের হার্ট অ্যাটাক ও হাটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে।
তুলসী পাতার অপকারিতা
- তুলসী পাতা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শ্বাসকষ্ট, মূত্র ও কাশির সঙ্গে রক্তপাত এর মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় এটি সেবন করার ফলে এটি গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।
- কাঁচা তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে এটি দাঁতে কালচে দাগ পড়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেই।
- যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের তুলসী পাতা না খাওয়ায় ভালো হবে। কারণ তুলসী পাতায় অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা খেলে এটি শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে এটি শরীরে স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট করে দেয়।
তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
তুলসী পাতার রস খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানা আমাদের সকলের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এই পাতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক ঔষধিগুণ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এজন্য তুলসী পাতার রস খাওয়াও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। এজন্য আপনাদের প্রথমে ২ টি তুলসী পাতা, ২ টেবিল চামচ মধু, আধা চিমটি হলুদের গুঁড়া, আধা চিমটি লং পেপার, আধা চিমটি কালো গোলমরিচ এই সবকিছু একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
এরপর এখান থেকে রস বের করে নিতে হবে। আপনারা এটি কে পাঁচ মিলি করে দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারবেন। এই রস খাওয়ার ৫ থেকে ১০ মিনিট পর হালকা গরম পানি খাবেন। যেহেতু এর মধ্যে প্রতিটি উপাদান খুব গরম প্রকৃতির, তাই এটি দুই সপ্তাহ খাওয়ার পর এটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এভাবে তুলসী পাতার রস খেলে আপনারা বেশি উপকার পাবেন।
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
কাশির জন্য তুলসী পাতা অত্যন্ত কার্যকরী এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম বেশ সহজ এবং সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ করলে এর দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। আপনারা কাশির জন্য তুলসী পাতা বিভিন্ন নিয়মে খেতে পারবেন তবে আমরা এখানে দুইটি সহজ নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। যে নিয়মে খাওয়ার ফলে আপনাদের কাশির সমস্যা অনেকটাই সেরে যাবে।
- সরাসরি খাওয়া: আপনারা কাশির সমস্যা দূর করতে তিন থেকে পাঁচটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি কাশির লক্ষণ কমাবে এবং শাসনতন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। আপনি চাইলে এই পাতাগুলো একটু মধু বা আদা মিশিয়ে খেতে পারেন, যা স্বাদের উন্নতি ঘটাবে এবং এর কার্যকারিতা আরো বাড়িয়ে তুলবে।
- তুলসী চা: আপনারা আপনাদের কাশির সমস্যা দূর করতে তুলসী চা তৈরি করতে পারেন। আপনারা চার থেকে পাঁচটি তুলসীপাতা এক কাপ গরম পানিতে সেদ্ধ করুন। এরপর কিছুক্ষণ রেখে আপনার তুলসী পাতার চাটিকে ছেকে নিন। আপনারা চাইলে এই চায়ের সঙ্গে মধু এবং আদাও মিশাতে পারেন। আপনাদের এই তুলসী পাতার চার দিনে দুই থেকে তিনবার পান করার ফলে আপনাদের কাশির সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ ধরে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
আর এ ধরনের আরও নিত্য নতুন আর্টিকেল করার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকে। আপনাদের যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url