নিম পাতার রস খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

আপনারা হয়তো বিভিন্ন জায়গায় নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে খুঁজেছেন। অনেক ওয়েবসাইট ঘুরেও হয়তো আপনি নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাচ্ছেন না। তাহলে আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
আর এছাড়াও আমরা আজকের এই আর্টিকেলে নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এজন্য আপনারা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করবেন।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিম পাতার উপকারিতা অনেক। বিশেষজ্ঞদের মতে কর্ম সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ করা যায় এই নিম পাতা খাওয়ার মাধ্যমে। আর নিমপাতা খাওয়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যেটি মেনে চললে এটি আমাদের সর্বাধিক উপকারিতা দিয়ে থাকে। নিচে নিম পাতার রস খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ
  • নিম পাতার রস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে সকালে খালি পেটে খাওয়া। সকালে খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে এটি দেহের ভেতরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  • নিমপাতা পরিষ্কার করে ভালোভাবে ধুয়ে তাজা রস তৈরি করে খেতে হবে।
  • প্রথমদিকে নিম পাতার রস খুব বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ এটি অনেক তিক্ত যার কারণে সবাই এটি খেতে পারে না। এজন্য প্রথমদিকে এক কাপ সমপরিমাণ নিম পাতার রস গ্রহণ করা উচিত।
  • যেহেতু নিম পাতার রস অনেক তিক্ত হয়ে থাকে, এজন্য আপনারা চাইলে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন যা আমাদের আরও বেশি স্বাস্থ্যকারী উপকারিতা দিয়ে থাকে।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার পরবর্তী এক ঘন্টা পানি খাওয়া বা কিছু খাওয়া উচিত নয়। যার ফলে এটি শরীরের মধ্যে সঠিকভাবে কাজ করবে।

নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা

নিমপাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা প্রাচীনকালেই জানা যায়। নিম পাতা প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিম পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিসেপটিক, আন্টি-ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের ত্বক এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এবার আমরা জেনে নেই নিমপাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা সম্পর্কে।
  • আপনাদের শরীরে যদি চুলকানি হয়ে থাকে তাহলে এই চুলকানি থেকে আরাম পেতে আপনারা নিমপাতা কে গরম পানিতে ফুটিয়ে গোসল করতে পারেন। নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল আমাদের শরীরে যে কোন সংক্রমণ ব্যাধি দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • নিম পাতায় রয়েছে অন্তিম ইনফ্লামেটরি গুণ, যা আমাদের ত্বকে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি পক্স, র্যাশ, এবং অন্যান্য ত্বকের প্রদাহ কমাতে খুবই কার্যকরী।
  • নিম পাতা দিয়ে গোসল করার কারণে এতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ আমাদের মুখে অ্যাকনে এবং ফুসকুড়ি মত সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
  • নিমপাতা দিয়ে গোসল করার কারণে এটি ত্বকের জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের ত্বক হয় স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল।
  • নিমপাতা দিয়ে গোসল করার ফলে এটি শরীরের ঘাম ও গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।
  • নিম পাতা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে বিশেষ করে ইনফেকশন ও সর্দি কাশির মতো রোগ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে থাকে।
  • নিম পাতা দিয়ে গোসল করার পর আমাদের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি অনুভূত হয়। এটিই দুশ্চিন্তা কমাতে এবং শরীরকে এক ধরনের রিল্যাক্স দিতে সাহায্য করে থাকে।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার রসের সাদ তেতো হলেও এর মধ্যে রয়েছে নানান ধরনের ঔষধি গুণ যা আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য মিষ্টি হতে পারে। মানুষ যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক ঔষধ এর পাশাপাশি ঘরোয়া উপায়ে নিম পাতার রস ব্যবহার করে আসছে। আপনারা অনেকেই হয়তো নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন। 
নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কিন্তু আমরা আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। যে সম্পর্কে জানার পরে আপনারা নিম পাতার রসের উপকারিতা পাশাপাশি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। নিচে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

  • সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এটি আমাদের শরীরের রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত প্রদান দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • নিম পাতার রসের মধ্যে রয়েছে কিছু ডায়াবেটিসের মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে। এটি কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার এবং স্তনের ক্যান্সার প্রতিরোধ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • নিম পাতার রসে উপস্থিত quercetin এবং -sitosterol, পলিফেনলিক ফ্ল্যাভোনয়েডগুলির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার ফলে নিমপাতা খালি পেটে খেলে এটি আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী হতে পারে।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে এটি পাকস্থলী ও হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি এটি আমাদের শরীরে গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে থাকে।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের ত্বকের ব্রণের মতো সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে এটি মাথার তালুর শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করতেও সহযোগিতা করে থাকে।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে এটি শিশুদের কৃমিনাশক রোগের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেতে পারেন।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

  • দীর্ঘদিন ধরে নিম পাতার রস খালি পেটে খাওয়ার ফলে এটি হিতে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।
  • কারো কারো এটি খাওয়ার পরে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং মাথা ব্যথার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিম পাতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • নিম পাতার রসে থাকা কিছু পদার্থ শিশুদের মধ্যে রে-সিন্ড্রোমের উপসর্গের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • যাদের অল্পতেই ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব হয় তাদের নিম ও তার রস সেবনের ফলে এটি তাদের অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতার গুঁড়া স্বাস্থ্য উপকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বিশেষ করে পেটের রোগ, ত্বকের সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এই নিম পাতার গুড়া যদি সঠিক নিয়মে খাওয়া হয় তাহলে এটির আরো বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে।

এজন্য আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। যে নিয়মে খাওয়ার ফলে আপনারা এটি থেকে পেতে পারেন আরো বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকরী উপকারিতা। এজন্য আপনারা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন। নিচে নিম পাতার গুড়া খাওয়ার কিছু নিয়ম পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

প্রথমত আপনারা এক চা চামচ নিম পাতার গুঁড়া, এক চা চামচ মধু এবং এক গ্লাস গরম পানি মিলিয়ে এটিকে ভালোমতো মিক্স করুন। অতঃপর আপনারা এই মিশ্রণটি সকালে ও রাতে খাবারের পর খাবেন। ডায়াবেটিস রোগীরা সকালে খালি পেটে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাছাড়াও এটি অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে এজন্য আপনাদের প্রয়োজন মোতাবেক খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

গর্ভবতী, ব্রেস্টফিডিং মা এবং যারা সন্তান ধারণের চেষ্টা করছেন তারা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অতএব নিম পাতার গুঁড়া খাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকরী উপকারিতা অর্জন করা সম্ভব। তবে এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা ও সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

চুলকানির সমস্যা আমাদের সবারই কমবেশি হয়ে থাকে, আর এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন ত্বকের আদ্রতা কম হওয়া, এলার্জি বা ইনফেকশন। নিমপাতা চুলকানির জন্য একটি প্রাকৃতিক উপশম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিম পাতার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টিফাংগাল গুনাগুনের সমৃদ্ধ যা আমাদের ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানির জন্য নিম পাতা ব্যবহার করতে প্রথমে কিছু তাজা ও ভালো মানের নিমপাতা সংগ্রহ করুন। এরপর তা ভালো করে ধুয়ে ভালোমতো পিষে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেজটি চুলকানি আক্রান্ত স্থানে লাগান এবং 15 থেকে 20 মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে এটি তত্ত্বের রাখতে সাহায্য করবে এবং এটি চুলকানির প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করবে।

তাছাড়াও আপনারা নিম পাতা সিদ্ধ করে তার পানি দিয়ে স্নান করলে এটি ত্বকের চুলকানি কমাতে সাহায্য করবে। নিমের গুনাগুন আমাদের ত্বকের জ্বালাপোড়া বা চুলকানি সৃষ্টি করা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্সকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে আনে। নিমপাতা ব্যবহারের ফলে এটি ত্বকের যেকোনো ধরনের চুলকানি দ্রুত উপশম করতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আমরা এখানে নিম পাতার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকরী উপকারিতা ও এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছি। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনারা আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এ ধরনের আরো নিত্যনতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url