গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব। আমরা অনেকেই রয়েছি যারা গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খেয়ে থাকি। কিন্তু এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেরই অজানা রয়েছে। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এই জন্য আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় নারীদের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খেতে হয় তাদের গর্ভে ধারণ করা শিশুর জন্য। আর এই সময় চিয়া সিড হতে পারে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি সুষম খাবার। কারণ চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং প্রোটিন।

এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে কিছু অপরিহার্য খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই সকল পুষ্টি উপাদানই গর্ভবতী মহিলাদের নানান ধরনের রোগ দূর করতে সহযোগিতা করে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক গরবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
  • গর্ভাবস্থায় আপনারা চাইলে প্রতিদিন এক থেকে দুই টেবিল চামচ চিয়া সিড এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে রেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পানিসহ সেটি খেতে পারবেন।
  • আপনারা রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস পানিতে কিছু চিয়া সিড ভিজিয়ে সারা রাত রেখে সকালে সেই জল যুক্ত চিয়া সিড খেতে পারবেন।
  • আপনারা চাইলে এটিকে দুধ বা ফলের জুসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন, এতে আপনাদের বিভিন্ন ধরনের উপকার পাবেন।
  • গর্ভবতী নারীরা চাইলে এটিকে সকালের নাস্তার সাথে যোগ করেও খেতে পারবেন।
  • চিয়া সিডের নিজস্ব কোন স্বাদ নেই এজন্য আপনারা চাইলে এটির সঙ্গে লেবু ও মধু মিশিয়েও খেতে পারবেন। অথবা চাইলে আপনারা সালাদের সঙ্গে যোগ করেও এটিকে খেতে পারবেন।
  • গর্ভবতী নারীরা এটি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পরিমাণ চিয়া সিড খেতে পারবেন। এর ফলে এটি আপনাদের ক্যালসিয়াম, ফাইবার ও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে সহযোগিতা করবে।
  • সব সময় পরিমাণ মতো চিয়া সিট খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ অতিরিক্ত চিয়া সিট খেলে এটি আপনার হজমের সমস্যা তৈরি করে গ্যাস ও পেট ফাঁপার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নানান ধরনের উপকারিতা রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গরবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নানান ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুনাগুন, যা গর্ভবতী শিশুর বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। তাহলে চলুন এবার গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নিচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
  • চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এটি গরবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কে সঠিক বিকাশ এবং বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করে। এছাড়াও ফ্যাটি এসিড গুলো হতাশা এবং উদ্বেগের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়াও যে সকল গর্ভবতী মহিলারা সামুদ্রিক খাবার খেতে পারেন না যা ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের উৎস, তারা সেই সামুদ্রিক খাবারের বিকল্প হিসেবে চিয়া সিড গ্রহণ করতে পারেন।
  • চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা গর্ভবতী শিশুর আহার ও দাঁত এর সঠিক বিকাশে জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • চিয়া সিড প্রোটিনের ভালো উৎস। যা গর্ভবতী মহিলাদের পেশী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি গর্ভবতী মহিলাদের সন্তানের বৃদ্ধি ও বিকাশে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় মেয়েদের দেহের রক্ত সরবরাহ কয়েক গুণ পরিমাণে বেড়ে যায়। আর এজন্য তাদের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়। আর এই সময় চিয়া সিড খেলে এর মধ্যে থাকা আয়রন মায়েদের শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াবে এবং অ্যানিমিয়া দূর করতে সহযোগিতা করবে।
  • গর্ভবতী মায়েদের আরেকটি বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে বদহজম, গ্যাস এবং এসিডিটি। আর এই সমস্যা থেকে রেহাই বেতে আপনারা চিয়া সিড খেতে পারেন। কারণ এটি ফাইবারের ভালো উৎস, যা হজমে সহযোগিতা করবে। এছাড়াও চিয়া শীটের মধ্যে থাকা ফাইভার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • এছাড়াও চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন জিংক, সেলেনিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ। এই সকল এন্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভবতী মহিলাদের একজিমা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো সমস্যা দূর করতেও সহযোগিতা করবে।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খেলে কি ক্ষতি হয়

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খেলে কি কোন ধরনের ক্ষতি হয়, এই সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আমরা এখন এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব। সাধারণত গর্ভাবস্থায়ী চিয়া সিড খাওয়া নিরাপদ এবং খুবই উপকারী। 

কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার, ওমেগা ৩ ফাটি এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য খুবই উপকারী। তবে কোন কিছুই পরিমাণে চেয়ে অতিরিক্ত খেলে এটি নানান ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

চিয়া সিড এর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। গর্ভাবস্থায় এটি নানান ধরনের উপকারিতা নিয়ে আসে ঠিকই তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। নিচে সে সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
  • চিয়া সিড উচ্চ ফাইবার যুক্ত হওয়ায় এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি গর্ভবতী নারীর পেটে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং ডায়রিয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • যে সকল নারীর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খায়, তাদের চিয়া সিড এড়িয়ে চলাই উত্তম হবে। কারণ এটি ওষুধের সঙ্গে মিশে ক্ষতিকর বিক্রিয়া করে গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
  • তাছাড়াও কিছু কিছু মানুষের চিয়া সিডের প্রতি এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যার ফলে গর্ভবতী নারীরা যদি চিয়া সিড খায় তাহলে তাদের চুলকানি, বমি বমি ভাব এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়াও যে সকল নারীর লো ব্লাড প্রেসার এর সমস্যা রয়েছে তাদের চিয়া সিড খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা দরকার। কারণ চিয়া সিড রক্তচাপ কমাতে পারে।
  • চিয়া সীড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহযোগিতা করে, যার ফলে গর্ভাবস্থায়ী চিয়া সিড খেলে এটি গর্ভবতী নারীর রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

চিয়া সিড কি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায়

চিয়া সিড কি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায়, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। তাহলে চলুন এইবার এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের সঠিক ধারণা দেওয়া যাক। চিয়া সিড গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায় এবং এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার।

তবে এটি তখনই উপকারী হবে যখন আপনি এটি সঠিক পরিমাণে এবং নিয়ম মেনে খাবেন। তার কারণ হচ্ছে কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। গর্ভাবস্থায়ী চিয়া সিড খেলে এটি গর্ভবতী নারীর নানান ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয়
চিয়া সিড এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা ৩ ফাটি এসিড ইত্যাদি। আর এই সকল উপাদান একজন গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই উপকারী। গবেষণা করে দেখা গেছে যে একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন ৬৫৯ মিলিগ্রাম ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড প্রয়োজন।

আর চিয়া সিড যেহেতু ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর ভালো উৎস সেহেতু গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীরা এটি খেলে এটি তাদের সেই ফ্যাটি অ্যাসিড এর অভাব পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়াও এর মধ্যে থাকা প্রোটিন ও আয়রন গর্ভাবস্থায় শক্তি বাড়াবে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে সহযোগিতা করবে।

সেই সাথে গার্ভাস্তায় চিয়া সিড খেলে এটি গর্ভকালীন নারীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহযোগিতা করবে। তাছাড়াও চিয়া সিড ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হাওয়ায় এটি গর্ভবতী নারীর শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গর্ভকালীন অবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে এটি গর্ভবতী নারীর নানান ধরনের উপকারিতা বয়ে আনবে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিয়া সিড খাওয়া উচিত।

চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে

অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন আছে সেটি হচ্ছে, চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে এই সম্পর্কে। জি চিয়া সিড খেলে বুকের দুধ এর পরিমাণ বাড়তে পারে। তার কারণ চিয়া শেড এর মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মেয়েদের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং দুধের পুষ্টিমান বাড়াতে সাহায্য করে।

চিয়া সিড খেলে এটি পানি শোষণ করে শরীরকে হাইড্রেড রাখতে সহযোগিতা করে, যা নারীদের বুকের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এটি প্রোল্যাকটিন হরমোনের কার্যকারিতা উন্নত করে, যা গর্ভবতী মায়েদের দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এজন্য আপনি যদি বুকের দুধ কম হওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনি চিয়া সীড সহ অন্যান্য ল্যাক্টেশন-বুস্টিং খাবার যেমন ওটস, মেথি, বাদাম, দুধ খেতে পারেন। আর এ সকল খাবার খাওয়ার ফলে এটি গর্ভবতী মায়েদের প্রাকৃতিক উপায়ে বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করবে।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। সেই সাথে আমরা এইখানে গরস্তায়ের চিয়া সিড খাওয়ার আরো বিভিন্ন ধরনের বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেগুলো আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

এ ধরনের আরও নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাব করে থাকি। এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সকলের শুভকামনা চেয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url