মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল আমরা আলোচনা করব। আপনারা হয়তো এই বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুঁজে দেখেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে হয়তো সঠিক কোন তথ্য পাচ্ছেন না।
মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই আমরা আজকের এই আর্টিকেলে উক্ত বিষয় সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এজন্য আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন।

মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মটরশুটি হচ্ছে একটি আমিষ সমৃদ্ধ সবজি। আর এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। সবজির মধ্যে যে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে তার চেয়ে মটরশুটিতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। আর এজন্য এই সবজিটি খেলে এটি আমাদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সহযোগিতা করে।

এছাড়াও মটরশুটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ই, কে, ফলিক এসিড, আইরন, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম। এর মধ্যে থাকা নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য নানান উপকারিতা বয়ে আনে।

সেই সাথে এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এর কিছু অপকারিতাও দেখা দিতে পারে। তবে এটির সামান্য পরিমাণে অপকারিতা রয়েছে, যেগুলো স্বল্পমেয়াদীর জন্য দেখা দিয়ে থাকে। তবে এই মটর শুটির এমন ধরনের উপকারিতা রয়েছে।

যার সম্পর্কে জানতে পারলে আপনারা এটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করে দেবেন। তাহলে চলুন এইবার মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ

মটর শুটির উপকারিতা
  • মটরশুঁটির মধ্যে এমন ধরনের উপাদান রয়েছে যা খাওয়ার ফলে এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
  • মটরশুঁটির মধ্যে ফাইবার ও আঁশের উৎস রয়েছে, যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে এটি আমাদের হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে বাঁচতে সহযোগিতা করে।
  • মেক্সিকান গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, মটরশুটিতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল রয়েছে। আর কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন দুই মিলিগ্রাম করে পলিফেলনসমৃদ্ধ খাবার খায় তাহলে এটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
  • মটরশুঁটি ভিটামিন বি এর ভালো উৎস যা আমাদের শরীরে হোমোসাইস্টাইন লেভেল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত এই সবজিটি খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করতে সহযোগিতা করে।
  • এই সবজিটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। কারণ এটি আমাদের শরীরে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • মটরশুটি হল লো ক্যালোরি এবং হাই ফাইবার যুক্ত একটি সবজি। যার ফলে যারা ওজন কমাতে চান তারা এই সবজিটি আপনার ডায়েটের খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন।
  • মটরশুঁটির মধ্যে আলফা-লিপোইক এসিড নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহযোগিতা করে।
  • এছাড়াও মটরশুঁটির মধ্যে লিউটেনিনক এবং জিজ্যান্থিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হয়েছে যা আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন সমস্যা কমিয়ে আনে।
  • মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
মটরশুঁটির অপকারিতা
  • যে সকল মানুষদের কিডনি রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য মটরশুঁটি খেলে তাদের কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • শীতকালীন সময়ে অনেকের ইউরিক এসিডের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, যার ফলে তাদের হাত ও পা ফুলে যায়। এ সকল ব্যক্তিরাও যদি মটরশুটি খায় তাহলে এটি তাদের ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • এছাড়াও যে সকল ব্যক্তিদের আইবিএসের সমস্যা রয়েছে তাদের মটরশুঁটি এড়িয়ে চলা উত্তম।
  • আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা গ্যাসের সমস্যায় নিয়ে বুকে থাকে। আর যে সকল ব্যক্তিদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের মটরশুঁটি এড়িয়ে চলায় ভালো। কারণ এই খাবারটি খাওয়ার ফলে এটি আপনাদের গ্যাসের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • তাছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে মটরশুঁটি খেলে এটি আমাদের শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে আমাদের শরীরে হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য অতিরিক্ত পরিমাণে মটরশুটি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক।

গর্ভাবস্থায় মটরশুটি খাওয়ার উপকারিতা

মটরশুঁটি হচ্ছে শীতকালীন একটি সবজি, যা সাধারণত শীতকালে পাওয়া যায়। এটি খেতে যেমন তেমন কিন্তু বিভিন্ন পুষ্টিগানে ভরপুর একটি সবজি। নিয়মিত এই সবজিটি খাদ্যের তালিকায় রাখলে এটি আমাদের শরীরে নানান ধরনের সমস্যা দূর করতে সহযোগিতা করে থাকে।

সেই সাথে মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে আজ থাকায় এটি আমাদের পেটকে অনেকক্ষণ ভরা রাখতে সহযোগিতা করে। এই সবজিটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। গর্ভবতী মায়েরা মটরশুঁটি খেলে এর মধ্যে থাকা জিংক, আয়রন অফ ক্যালসিয়াম তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

অনেক গর্ভবতী মায়েরা রয়েছে যারা তাদের ওজন বাড়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে যায়। এজন্য তারা যদি নিয়মিত পরিমান মত মটরশুটি খায় তাহলে এটি তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ ভালো রাখতেও সহযোগিতা করে থাকে।

মটরশুঁটির মধ্যে থাকা ফলিক অ্যাসিড গর্ভবতী মা ও গর্বে থাকা শিশুর জন্য খুবই উপকারী। মটর শুটির মধ্যে থাকা আইরন এটি গর্ভবতী মায়ের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা এবং গর্ভে থাকা সন্তানকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহযোগিতা করে থাকে।

মটরশুঁটিতে ফলিক এসিড রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সন্তানের জন্মের সময় মেরুদন্ডের জন্মগত ত্রুটি কমাতে সহযোগিতা করে থাকে। সেই সাথে মটরশুঁটি খেলে এটি নবজাতক শিশুর হাড় গঠনে সহযোগিতা করে থাকে।

মটরশুটি খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় মটরশুটি খাওয়ার উপকারিতা
আপনারা ইতিপূর্বেই মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা সহ গর্ভবতী অবস্থায় মটরশুটি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা মটরশুটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেনা তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি তাদের জন্যই।

মটরশুটি খুবই উপকারী একটি সবজি যা সাধারণত রান্না করার চেয়ে কাঁচা অবস্থায় খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে। মটরশুটিকে যদি আপনারা অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভেজে ফ্রাই করেন বা অতিরিক্ত লবণ সহ খান তাহলে এর মধ্যে কোন ধরনের পুষ্টি পাওয়া যায় না।

এজন্য এটিকে আপনারা কাঁচা অবস্থায় বা সেদ্ধ করে অথবা সালাত এবং ভর্তা বানিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও আপনারা এটিকে সুখ এবং পাস্তার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারবেন। আপনারা চাইলে আপনাদের বাচ্চাদেরকে নাস্তার সাথেও মটরশুঁটি দিতে পারবেন।

এমনকি আপনার বাচ্চার বয়স যদি ৭-৮ মাস হয়ে থাকে তাহলে এটি তাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর সবজি হতে পারে। এজন্য আপনারা বাচ্চাদের মটরশুটিকে সেদ্ধ করে ব্লেন্ড করে খাওয়াতে পারেন।

মটরশুটিতে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে

মটরশুটি এমন এক ধরনের সবজি যা সাধারণত শীতকালে সময় পাওয়া যায়। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ডাল জাতীয় ফসল। এর মধ্যে রয়েছে নানান ধরনের পুষ্টি গুনাগুন ও উপকারিতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুঁটির মধ্যে রয়েছে:
  • জলীয় অংশ: ১৬.০ গ্রাম
  • খনিজ পদার্থ: ২.২ গ্রাম
  • আঁশ: ৪.৫ গ্রাম
  • খাদ্যশক্তি: ৩১৫ কিলোক্যালরি
  • আমিষ: ১৯.৭ গ্রাম
  • শর্করা: ৫৬.৫ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: ৭৫মিগ্রা
  • লৌহ: ৫.১ মিগ্রা
  • ক্যারোটিন: ৩৯ মাইক্রো গ্রাম
প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুটিতে উপরে উক্ত পুষ্টি উপাদান গুলো পাওয়া যায়। আর এ সকল উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো এবং স্বাস্থ্যকর। এজন্য আমাদের সকলেরই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় মটরশুটিকে রাখা উচিত।

মটরশুটি খেলে কি ওজন বাড়ে

আমরা অনেকেই রয়েছি যারা মটরশুঁটি খেতে ভালবাসি বা খেয়ে থাকি। তবে আমাদের অনেকের মনে একটি প্রশ্ন রয়েছে সেটি হচ্ছে মটরশুটি খেলে কি আমাদের ওজন বাড়বে? এই সম্পর্কে। তাহলে চলুন এইবার এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

মটরশুটি হচ্ছে একটি শীতকালীন ডাল জাতীয় সবজি। এই সবজিটি লো ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত একটি খাবার। যার ফলে এই সবজিটি পরিমাণ মতো খেলে এটি আমাদের ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাছাড়াও এই সবজিটি উচ্চ ফাইবার যুক্ত হওয়ায় এটি দীর্ঘক্ষণ আমাদের পেট কে ভরা রাখতে সহযোগিতা করে থাকে। যার ফলে এটি খেলে এটি আমাদের নাস্তা জনিত খাবার খাওয়ার চাহিদা কমিয়ে আনে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মটরশুঁটি কোন ঋতুতে হয়

মটরশুঁটি কোন ঋতুতে হয়
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর এজন্য আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষেরই কৃষি কাজ করে জীবন যাপন চালাতে হয়। আর বিভিন্ন মৌসুমে তারা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকে। আর সেসকল সবজির মধ্যে মটরশুটিও চাষ হয়ে থাকে। মটরশুঁটি সবজিটি একটি শীতকালীন সবজি।

যার জন্য এই সবজিটি সাধারণত মাঘ-ফাল্গুন মাসে বপন করা হয়ে থাকে এবং এই সময়টিকেই উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয় এই সবজিটি চাষ করার জন্য। এজন্য আপনারা যারা এই সবজি টি চাষ করতে চান তারা মাঘ-ফাল্গুন মাসে চাষ করতে পারেন।

মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা মটরশুঁটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। আমরা আপনাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে মটরশুটি নিয়ে আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরেছি। যেগুলো আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

এতক্ষণ ধরে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই মটরশুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গিয়েছেন। তাহলে এ ধরনের যদি আরো নিত্য নতুন পড়তে চান তাহলে আমার এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন এবং আমাদের সাপোর্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url